নিরাপদ তরল দুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন

মানবশিশুর শরীবের গঠন, বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ এবং শক্তি জোগানো অর্থাৎ সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। এ খাদ্য পেতে গ্রহণ করতে হয় আমিষ, শর্করা, স্নেহজাতীয় বা তেল, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। একমাত্র দুধেই খাদ্যের এসব উপাদান পরিমিতভাবে বিদ্যমান। এজন্য দুধকে আদর্শ খাবার বলা হয়। আর দুধ তরল হওয়ায় মানবশিশুর জন্য খুবই উপযোগী।
শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। এটি পরিষ্কার, নিরাপদ এবং শিশুর জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রায় নিঃসরিত হয়। এটি গ্রহণে শিশুর সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেক কমে যায়। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে পরিপূর্ণভাবে।
গরু-মহিষের দুধ মিষ্টান্ন তৈরিসহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরির অপরিহার্য উপাদান। ফলে দেশে কৃত্রিম দুধের চাহিদা বেশি। এসব বিবেচনায় দেশে গুঁড়া ও তরল দুধের ব্যবসা বেড়ে উঠছে। দেশে খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করার পাশাপাশি আমদানি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। অনেক দিন ধরেই এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনসহ (বিএসটিআই)। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষণেও এসব দুধের নিন্মমান পাওয়া গেছে, গণমাধ্যমেও মাঝেমধ্যে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে ভোক্তাসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই।
তরল দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএসটিআইর বিপরীতমুখী প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবে বলেই ধারণা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মাসি অনুষদের গবেষকরা বলছেন, আড়ং-ফার্ম ফ্রেশ-মিল্ক ভিটাসহ বাজারে প্রচলিত সাতটি পাস্তুরিত দুধে মানবচিকিৎসায় ব্যবহার করা ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে বিএসটিআই বলছে, বাজারে থাকা ১৪ ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কোনো কিছুই পায়নি তারা। আদালতে সংস্থাটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তরল কিংবা গুঁড়া দুধের বিজ্ঞাপনে বলা হয় এবং মোড়কে মুদ্রিত থাকে ‘মায়ের দুধের বিকল্প নয়’। সেটি জেনেও ভোক্তারা এসব দুধ কেনেন, এটিই বাস্তবতা। এখন এগুলো নিয়ে বিপরীতমুখী গবেষণা প্রতিবেদন ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করবে। কোনটিতে আস্থা রাখবেন তারা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি বিএসটিআই।
গবাদি পশুর খামার, দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরি ও বিপণনে যেমন হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে আবার সুস্থ-সবল জনশক্তিও দেশের সম্পদ। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না করা হলে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে। তাই তরল দুধের মান প্রশ্নে মতদ্বৈধতা নিরসন ও নির্ভরযোগ্য নিরীক্ষণে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।