Print Date & Time : 30 July 2025 Wednesday 3:41 am

নিরাপদ শহরের তালিকায় শেষের সারিতে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের নিরাপদ শহরগুলোর তালিকায় গতবারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এর পরও ৬০ শহরের এই তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৫৬তম। বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের মতো যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের গবেষণা শাখা দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ‘নিরাপদ শহর সূচক ২০১৯’ প্রকাশ করেছে। ২০১৫ সালে প্রথম এই সূচক প্রকাশ করে ইআইইউ। এরপর দ্বিতীয় প্রকাশনাটি ছিল ২০১৭ সালে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাÑএই চার ক্যাটেগরিতে ৫৭টি উপসূচকের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুতি করেছে দি ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট। এক্ষেত্রে চার ক্যাটেগরির মানের ভিত্তিতে একশ’র মধ্যে শহরগুলোর স্কোর করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৬০টি বড় শহরকে নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এনইসি করপোরেশনের অর্থায়নে ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট এই নিরাপদ শহর সূচক (এসসিআই) প্রকাশ করছে। এতে শহরগুলোয় নিরাপত্তা বিধান ও এর ফলাফলের মাপকাঠি বৃহত্তর পরিসরে তুলে ধরা হয়েছে।
তালিকা অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ পাঁচ শহর হলো যথাক্রমে জাপানের রাজধানী টোকিও (স্কোর ৯২), সিঙ্গাপুর (স্কোর ৯১.৫), জাপানের বন্দরনগরী ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র ওসাকা (স্কোর ৯০.৯), নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম (স্কোর ৮৮) এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি (স্কোর ৮৭.৯)। সার্বিকভাবে সবচেয়ে কম নিরাপদ পাঁচ শহর হলো যথাক্রমে ঢাকা (স্কোর ৪৪.৬), পাকিস্তানের করাচি (স্কোর ৪৩.৫), মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন (স্কোর ৪১.৯), ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাস (স্কোর ৪০.১) ও নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লাগোস (স্কোর ৩৮.১)।
এদিকে তালিকায় পার্শ^বর্তী দেশ ভারতের মুম্বাই শহরের অবস্থান রয়েছে ৪৫ এবং দিল্লির অবস্থান রয়েছে ৫২-তে।
সূচকের সঙ্গে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে বর্তমানে মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬ শতাংশের বেশি শহরাঞ্চলে বসবাস করছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই হার বেড়ে ৬৮ শতাংশে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ধারণার চেয়েও বেশি গতিতে নগরায়ণ হচ্ছে বিশ্বে। এই নগরায়ণের হার সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান উন্নয়নশীল দেশগুলোয়। তবে নগরায়ণের চ্যালেঞ্জগুলো যদি মোকাবিলা না করা হয়, তাহলে অর্থনৈতিক ঝুঁকিসহ নানা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নগর ব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতে মানুষের জীবনমান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ক্ষেত্রে বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা বিধানে শহরগুলোর সক্ষমতাই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠবে।
এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা ক্যাটেগরিতে ঢাকার অবস্থান ৬০ শহরের মধ্যে ৫৭তম। অর্থাৎ এই শহর এই ক্যাটেগরিতে সবচেয়ে কম নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। স্বাস্থ্য নিরাপত্তায়ও ঢাকা ৫৭তম অবস্থানে রয়েছে। চার ক্যাটেগরির মধ্যে অবকাঠামো নিরাপত্তায় ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এই ক্যাটেগরিতে ঢাকার অবস্থান ৫৯তম। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ক্যাটেগরিতে ঢাকার অবস্থান ৫৫তম।
এদিকে ‘নিরাপদ শহর সূচক ২০১৭’-এ সার্বিকভাবে ঢাকার অবস্থান ছিল ৬০ শহরের মধ্যে ৫৮তম। সেবার ডিজিটাল নিরাপত্তা ক্যাটেগরিতে ঢাকার অবস্থান ছিল ৫৮তম। আর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ক্যাটেগরিতে ৫৯তম, অবকাঠামো নিরাপত্তায় ৬০তম এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় ৪৩তম অবস্থানে ছিল ঢাকা। সেদিক থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও অবকাঠামো নিরাপত্তায় ঢাকার সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে ধস নেমেছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তায়। দুই বছরে এই ক্যাটেগরিতে ঢাকার অবনতি ঘটেছে ১২ ধাপ।
বিগত ১০ বছরের প্রতিবছরই ঢাকার জনসংখ্যা বেড়েছে গড়ে সাড়ে চার লাখ করে। এ শহরে জীবনের নিরাপত্তা অনেক কম। এক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান ৫৯তম আর স্কোর একশ’র মধ্যে ৪৮। এছাড়া সম্পদের নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে কম। এ ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান ৫৬তম ও স্কোর একশ’র মধ্যে ৪০.৮।