বিমা আইন ভেঙে বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়

নিরীক্ষকের প্রশ্নের মুখে এশিয়া প্যাসিফিক

মো. রাহাতুল ইসলাম : বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে নিরীক্ষকের প্রশ্নের মুখে পড়েছে সাধারণ বিমা কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। ২০২৪ সালে ব্যবস্থাপনার ব্যয় বিমা আইনের নির্দেশিত সীমায় রাখতে পারেনি কোম্পানিটি। পরিমাণে কম হলেও সেই ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির দাবি, সময়ের সঙ্গে খরচ বাড়লেও আইনি সীমা বাড়েনি। তাই এবার সীমার চেয়ে ১৫ লাখ টাকা বেশি খরচ হয়েছে।

ডিএসই সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদ্যমান বিমা আইন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স প্রায় ১৭ কোটি ২৭ লাখ ব্যয় করতে পারে। কিন্তু গত বছরে এ খাতে প্রায় ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। অর্থাৎ ২০২৪ সালে আইনি সীমার চেয়ে প্রায় ১৫ লাখ ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। তাই নিরীক্ষাকালে বাড়তি ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। এ ব্যয়ের বিষয়ে কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছে নিরীক্ষক।

বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে আলাপকালে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম সাইদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা আইন মেনে ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু চলমান বাজার পরিস্থিতি, জনবল সংকট আর প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। সীমার চেয়ে ১৫ লাখ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। আমরা এবার গ্র্যাচ্যুইটি ফান্ডের জন্য অর্থ রেখেছি, সে কারণেও ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতির তুলনায় আইনি সীমা কয়েক বছর আগের, ব্যবসায়িক পরিস্থিতিও সুবিধাজনক নয়। সে কারণেই ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে পলিসি বিক্রি করে মোট ৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার প্রিমিয়াম আয় করেছে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৪৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ হিসেবে এক বছরে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বা চার কোটি ৭৪ লাখ টাকা কমেছে। পুনঃবিমা ব্যয় বাদ দিয়ে ২০২৪ সালে নিট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ নিট প্রিমিয়াম বছরের ব্যবধানে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা কমেছে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ২০২৪ সালে ৩২ লাখ টাকা বেড়ে ১০ কোটি ৮১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে কোম্পানির আয়ে কিছু খাতে চাপ থাকলেও মুনাফায় ইতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। তবে আর্থিক প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটি ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমদিত মূলধনের বিপরীতে পরিসধিত মূলধন ৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২ দশমিক ৫৫ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গতকাল সর্বশেষ কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার পুঁজিবাজারে ২৮ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হচ্ছে।