‘ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানকে হয়রানির অভিযোগ: অজুহাত ইউডি নেই, একই প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার অডিট’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তাতে দেশে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ রয়েছে। ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে এমনিতেই দেশ একপ্রকার নিচের দিকে রয়েছে। এখন এমন হয়রানি নিশ্চয়ই আমাদের অবস্থানকে আরও নড়বড়ে করবে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সরকার কর অবকাশসহ নানা সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানিমুখী। নিয়ম অনুযায়ী পণ্য রপ্তানিতে ইপিজেড অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন-ইউডি’র প্রয়োজন নেই। অথচ যে প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বিক্রি বা রপ্তানি করা হচ্ছে, তাদের থেকে ইউডি নিতে বলা হচ্ছে কাস্টমের পক্ষ থেকে। রপ্তানিকারকদের অনেক দিনের অভিযোগ, ইউডি না থাকলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইপিজেডের এক প্রতিষ্ঠানকে এনবিআরের একাধিক দপ্তর অডিট করছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার যে প্রতিষ্ঠানের কাছে ইপিজেডভুক্ত প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি করছে, সেই প্রতিষ্ঠানে পণ্য পৌঁছানোর আগেই বন্ড, কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তারা হানা দিচ্ছে। পণ্য না পেলে বলা হচ্ছে, অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পণ্য কারখানায় পৌঁছানোর আগেই কর্মকর্তারা কারখানায় গিয়ে পণ্য পান না; পরে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। কয়েক মাস ধরে এ হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হয়রানির ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যাতে রপ্তানিতে প্রভাব পড়ছে।
বেপজার নিয়ম অনুযায়ী, ইপিজেডে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ইউডি, আইআরসি, ইআরসি লাগবে না। এছাড়া বন্ড লাইসেন্স নবায়ন করা লাগবে না। বেপজার ওয়েবসাইটেও বিষয়টি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বেপজায় অবস্থিত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা নিতে পারবে।
আলোচ্য প্রতিবেদনে আমাদের প্রতিবেদক বিস্তারিত তুলে ধরেছেন রপ্তানিকারক কীভাবে, কোন কোন পর্যায়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতীয়মান হয়, কাস্টমসের এমন কার্যক্রম বাড়াবাড়ি পর্যায়ের; এটি দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয়। একটি পণ্য কারখানা থেকে বের হলেই তা এক মুহূর্তে ক্লিক করা মাত্রই দেখায় পণ্য বেরিয়েছে। কিন্তু এক মুহূর্তেই তা গন্তব্যে পৌঁছায় না। যেমন উত্তরা ইপিজেড থেকে তা ট্রাক বা কার্গোযোগে সিইপিজেড পৌঁছাতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। আরও বেশি সময়ও লাগে। অ্যাসাইকুডার তথ্য দেখে তাৎক্ষণিক পণ্যের গন্তব্যস্থলে গিয়ে পণ্য না পেয়ে পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে, খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছেÑএমন মন্তব্য করা সমীচীন নয়। এখানে কেবলই দায়িত্ব পালন নয়, অন কিছুর সংশ্লেষ রয়েছে ধারণা করা যায়।
গন্তব্যে পণ্য যাওয়ার আগেই যদি ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাজির হয়ে মামলা দিয়ে থাকেন; তা বাড়াবাড়ি বলেই আমরা মনে করি। ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানে যেসব বিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নেই, সেসব বিধি পরিপালন করছে না দাবি করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক নয়। বিষয়টি গরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধানে দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা বিড়ম্বনা এড়াতে এখন ইপিজেডের অ্যাকসেসরিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পণ্য কিনছে না, করা হচ্ছে আমদানি, প্রভাব পড়ছে রিজার্ভে।
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়। এসব সমস্যা সমাধান করলেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহী করা যাবে।