বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দেশের পুঁজিবাজার। স্বাভাবিকভাবেই এখন তার সংশোধন প্রয়োজন। কারণ বাজার একটানা বাড়তে থাকলে একসময় ধসে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, দেশের পুঁজিবাজার একটি খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এটা বাজারের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। কারণ পুঁজিবাজার অনেকগুলো খাত দিয়ে গঠিত। সব খাতেই ভালো ও দুর্বল কোম্পানি আছে। সব খাতের ভালো কোম্পানি একসঙ্গে বাড়লে সেটাকে স্বাভাবিক বলা যায়। কিন্তু যদি একটি সুনির্দিষ্ট খাতের সবল-দুর্বল সব কোম্পানির দর একযোগে বাড়ে, সেটা স্বাভাবিক নয়। আর একটি খাতের দর একটানা বাড়তে দেখে অন্য খাতের বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাদেরও সুসময় আসবে। শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছিলেন স্টার লিংক স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও এসএম নাসির উদ্দিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী।
এসএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিনের মন্দাবস্থা কাটিয়ে স্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি শেষ কয়েক মাসে টার্নওভার ও সূচক একটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সূচক কাক্সিক্ষত পর্যায়ে গেলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য খাতে এখনও অনেক শেয়ারের দর বিগত দু-এক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ পর্যায়ে অবস্থান করছে। আমার মনে হয় এর কারণ প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি ও বড় বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকিং খাতে অধিক মনোযোগ। আবার পুঁজিবাজারে যারা নিয়মিত কেনা-বেচা করেন তারা এখন ব্যাংক খাতে খুব একটা নেই। তারা এখন প্রকৌশল, টেক্সটাইল বা অন্যান্য খাতের দিকে ঝুঁকছেন। সূচক বাড়ার পেছনে ব্যাংক খাতের যথেষ্ট ভ‚মিকা থাকলেও দীর্ঘ সময় যদি একটি খাত উর্ধ্বমুখী থাকে তাহলে অন্যান্য খাত বঞ্চিত হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে ওই খাতে বিনিয়োগ শুরু করেন। আর তখনই বড় বিনিয়োগকারীরা ওই খাত থেকে বেড়িয়ে আসেন। কাজেই আমি মনে করি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করে ধৈর্য ধরতে হবে। এছাড়া সামনে আসছে জুন ক্লোজিংয়ের ঘোষণা। আর জুন ক্লোজিংয়ে অনেক ভালো শেয়ার আছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এখন সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।
মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের মার্কেট অনেক দিন ধরেই নি¤œমুখী ছিল। সবার প্রত্যাশা ছিল মার্কেট ভালো হবে এবং তা হচ্ছেও। বিশেষ করে এ বছর থেকে পুঁজিবাজারের সূচক বেশ বেড়েছে। তবে মার্কেট যে বাড়ছে তা ব্যালেন্স হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কারণ মার্কেট যখন বাড়ে তখন তা টেকসই হওয়াটি খুব জরুরি। তাছাড়া একটি খাত নিয়ে বাজার নয়। বাজারে অনেকগুলো খাত আছে এবং প্রতি খাতেই ভালো-খারাপ কোম্পানি আছে। আর একটি মার্কেটকে তখনই ভালো বলা যাবে যখন প্রতিটি খাতের ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়বে। কাজেই এ বিষয়টি বাজার সংশ্লিষ্ট সবারই মাথায় রাখা উচিত বলে মনে করি। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বাজার বাড়াটিও স্বাভাবিক নয়। এতে হঠাৎ পতনের সম্ভবনা থাকে। তিনি বলেন, একটি খাত যখন বাড়ে তখন ওই খাতের ভালো-খারাপ সকল কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে। আমি মনে করি এটি উচিত নয়। কারণ এটি মার্কেট সম্পৃক্ত সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনো শেয়ারে বিনিয়োগের পর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করুন। শেয়ার দর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের পর প্রত্যাশা আরও না বাড়িয়ে সংরক্ষিত শেয়ার ছেড়ে দিন। এরপর অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করুন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। পুঁজি আপনার কাজেই বুঝেশুনে বিনিয়োগ করুন। কারণ ক্ষতিগ্রস্থ হলে আপনাকেই হতে হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম