শেখ শাফায়াত হোসেন: আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। এই অর্থবছর থেকে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর দুই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা আছে বাজেটে। আজ জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হতে চলেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর সরকার ঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা কীভাবে বিতরণ করা হবে এবং সুবিধাভোগীরা তা কীভাবে পাবেন সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। ফলে এ বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছেন বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী এবং তাদের স্বজনরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে আসেনি। যে কারণে ঠিক কীভাবে অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হবে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে কোনো নির্দেশনা দিতে পারছেন না তারা।
তারা আরও জানান, রফতানির বিপরীতে দেওয়া প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা এবং রেমিট্যান্সের প্রণোদনা একইভাবে দেওয়া সম্ভব হবে না। কেননা রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়া হয় রফতানির মূল্য প্রত্যাবাসনের পর এবং রফতানি মূল্যের সঙ্গে নগদ সহায়তা যোগ করে একসঙ্গে দেওয়া হয় না। রফতানি মূল্য আসার পর সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করে পরে ওই প্রণোদনার অর্থ পাওয়া যায়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্সের প্রণোদনা যদি রেমিট্যান্স দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীদের স্বজনদের হাতে তুলে দিতে হয় তাহলে ব্যাংককে প্রণোদনার অর্থ সঙ্গে সঙ্গেই সরকারের কোনো একটি তহবিল থেকে দিয়ে দিতে হবে। নইলে ব্যাংকের তহবিল থেকেই প্রণোদনার টাকা দিতে হবে। এতে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, রেমিট্যান্সের প্রণোদনা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং সেই তহবিলের অর্থ বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের অর্থে গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের স্বজনদের অনেকেই আসন্ন অর্থবছর থেকে এই প্রণোদনাপ্রাপ্তির আশায় চলতি জুন মাসে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি কবে থেকে কীভাবে এই প্রণোদনা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। তবে নির্ভরযোগ্য কোনো নির্দেশনার খবর না পেয়ে একরকম অন্ধকারে রয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন মাসের বাকি দিনগুলোতে আরও ৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসতে পারে। প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসলে জুন মাসে মোট রেমিট্যান্স ১২৭ থেকে ১৩০ কোটি ডলার হতে পারে। অথচ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ পাঁচ মাসের সব মাসেই ১৩০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এমনকি অর্থবছরের ১১ মাস ২১ দিনে (১ জুলাই ২০১৮-২১ জুন ২০১৯) রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৬০৩ কোটি ডলার। অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপর।
এই পরিস্থিতিতে বৈধপথে অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স বাড়াতে বাজেটে ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নে আসন্ন অর্থবছরে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশা থাকলেও প্রণোদনাপ্রাপ্তি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। প্রণোদনা প্রদানের কৌশল সম্পর্কে জানতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতে সাড়া দেননি।
অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা দিতে আসন্ন অর্থবছরে বাজেট থেকে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে সরকার। দুই শতাংশ প্রণোদনা দিলে প্রবাসীদের পাঠানো বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে দেওয়া প্রতি ১০০ টাকায় বাড়তি দুই টাকা পাবেন স্বজনরা।
চলতি অর্থবছরের মতো ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকলেও আসন্ন অর্থবছরে এক হাজার ৭৬০ কোটি ডলারের মতো রেমিট্যান্স আসার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিমাণ রেমিট্যান্সের ওপর দুই শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের জন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা পর্যাপ্ত হলেও এখনও কোনো নির্দেশনা না আসায় ব্যাংকগুলোও এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারা বলছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে এই প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া গতকাল শেয়ার বিজকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তারা প্রণোদনা দিতে পারবেন না। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনাও তাদের কাছে আসেনি।
এদিকে প্রণোদনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কী উদ্যোগ রয়েছে সে বিষয়ে জানতে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ ও বৈদেশিক মুদ্রা অপারেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতে সাড়া দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং সহকারী মুখপাত্র মহাব্যবস্থাপক জিএম আবুল কালাম আজাদকেও গতকাল মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।