Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 6:27 pm

নির্ধারিত সময়ে আসছে না ১৮ জীবন বিমা কোম্পানি

পলাশ শরিফ: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানিই পুঁজিবাজারে আসছে না। তবে ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আইপিও প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাকি ১৮টি জীবন বিমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণের জন্য আরও সময় নিতে হচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তালিকাভুক্তি ইস্যুতে এমন অগ্রগতিতেই সন্তুষ্ট থাকছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

তথ্যমতে, জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে ২৭ বিমা কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারের বাইরে রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ওই কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কিন্তু পরিশোধিত মূলধন, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন, করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের শর্ত পরিপালন, ব্যবসায়িকভাবে সন্তোষজনক অবস্থানে থাকা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে বিতর্কের মুখে থাকার কারণে কোনো কোম্পানিই নির্ধারিত সময়ে পুঁজিবাজারে আসতে পারছে না। ওই সময়ের মধ্যে ক্রিস্টাল, মেঘনা, সাউথ এশিয়া, ইসলামী কমার্শিয়াল, ইউনিয়ন, দেশ জেনারেল ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সসহ ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেছে।

এদিকে পুঁজিবাজারে আসতে আরও সময় চাইছে বাকি ১৮ জীবন বিমা কোম্পানি। কারণ, অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন ছাড়া ওই জীবন বিমা কোম্পানিগুলো আইপিও আবেদন করতে পারবে না। এজন্য কোম্পানিগুলোকে আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পর ভ্যালুয়েশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই আইনি-প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে কোনো কোম্পানিই নির্ধারিত সময়ে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। তাই ২৭টির তালিকাভুক্তি নির্দেশনার বিপরীতে ৯টি কোম্পানির আবেদন আইপিও প্রক্রিয়া শুরু করাতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীলদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি-সংক্রান্ত আইনি নির্দেশনা ভঙ্গ করছে। এজন্য কোম্পানিগুলোকে বারবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জরিমানা দিয়ে হলেও পুঁজিবাজারের বাইরে থাকছে। সে কারণেই কোম্পানিগুলোকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে আসতে হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শর্ত পূরণ করেই আসতে হবে। তাই কিছু কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেছি। এখন পর্যন্ত ৯টি কোম্পানি আইপিওর আবেদন করেছে। বাকিগুলোকে আইপিওতে আসতে হলে আরও সময় দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে সময় দেওয়ার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমা খাতের বেশকিছু কোম্পানির করপোরেট সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও প্রতিশ্রুতি পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে সঙ্গে আয়-ব্যয়ে অসংগতি ও তারল্য সংকটের কারণে কিছু কোম্পানি গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। তাই কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীর কাছে জবাবদিহি এড়াতে আইন মেনে পুঁজিবাজারে আসছে না। এককালীন ও দৈনিক হারে জরিমানা গুনেও পুঁজিবাজারের বাইরে থাকছে তারা।

খাত-সংশ্লিষ্টরাও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আলাপকালে বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তালিকাভুক্তি ইস্যুতে এবার আইডিআরএ, বিএসইসি ও বিআইএ একসঙ্গে কাজ করছে। তবে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন ও তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া বিবেচনায় নিয়েই এগোতে হবে।’

আইন ভেঙে জরিমানা গুনেও বছরের পর বছর পুঁজিবাজারের বাইরের থেকে ব্যবসা করায় হঠাৎ করেই সবর হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তার নির্দেশনার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২৭ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘জিইয়ে রাখা জটিলতা’র কারণে আইডিআরএ’র নির্দেশনার পরও সিংহভাগ কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিদ্যমান যেসব জটিলতার কারণে তালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারছে না, তা আলোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তালিকাভুক্তি ইস্যুতে কঠোর অবস্থান থেকে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সরে আসতে হচ্ছে।