নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ৬০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। চলতি বছর মার্চে ৭০ কিলোমিটার চার লেনের কাজ শেষ কথা ছিল। তবে পাঁচ বছরে প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। যদিও এরই মধ্যে দুই দফা বেড়েছে প্রকল্পটির ব্যয়। এবার তৃতীয় দফা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল চার লেনের। পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে ৭৮ শতাংশ। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উঠার কথা রয়েছে।

তথ্যমতে, উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তদেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম জোরদার করে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এতে মূল মহাসড়ক চার লেন ছাড়াও ধীরগতির যানবাহনের জন্য ৯০ কিলোমিটার পৃথক সড়ক, দুটি রেল ওভারপাস, তিনটি ফ্লাইওভার, ২৬টি ছোট ও মাঝারি সেতু ও ৬০টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মূল সড়ক ভবন নির্মাণও প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ভ্রমণ করে দেখা গেছে, ৭০ কিলোমিটারের বেশিরভাগ জায়গায় মাটির কাজ চলছে। কোথাও মূল চার লেনের মাটির কাজ শেষে উপরিভাগের (ব্ল্যাক টপ) কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অংশেই এখনও মাটির কাজ শেষ হয়নি। এছাড়া কোথাও কোথাও মূল চার লেনের পাশে সার্ভিস লেনের জন্য মাটি ফেলা হচ্ছে। এদিকে ২৬টি ছোট-বড় সেতুর মধ্যে ২৪টি সম্পন্ন হয়েছে। আর ৬০টি কালভার্টের ৫২টি নির্মাণ হয়ে গেছে। তবে এগুলোর সংযোগ সড়ক এখনও সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া ফ্লাইওভার ও রেলওয়ে ওভারব্রিজের নির্মাণকাজ এখনও চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

গত ১৪ মার্চ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, প্রকল্পটির সার্বিক কাজ ৫৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের আগে ৫০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণসহ সবগুলো সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ সমাপ্ত হবে। এছাড়া ফ্লাইওভার ও রেলওয়ে ওভারব্রিজের নির্মাণকাজ আগামী অক্টোবরে শেষ হবে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির শুধু জয়দেবপুর থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার দুই পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের কথা ছিল। আর কালিকাকৈর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অংশের এক পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের কথা ছিল। তবে পরে তা সংশোধন করে পুরো চার লেনের উভয় দিকেই সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি দুই দিকের সংযোগ স্থাপনে সাতটি আন্ডারপাসও নির্মাণ করা হবে। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দেওয়ার কথা ছিল এক হাজার ৮৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে দেওয়ার কথা ছিল ৯৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির যুক্তিতে সেবার প্রকল্প ব্যয় ২৭৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

এদিকে গত বছর আবারও জমির দাম বৃদ্ধির যুক্তিতে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বাড়ানো হয় ২৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। দুবারই সরকারি খাতের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তবে এবার নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি, প্রতিটি প্যাকেজের চুক্তি মূল্য বৃদ্ধি ও সড়কের দুই পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণের কারণে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তৃতীয় দফায় ব্যয় বাড়ছে দুই হাজার ৬৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা বা ৭৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ব্যয়ের বড় অংশই যাচ্ছে মহাসড়কটির উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণে। এক্ষেত্রে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে দুই হাজার ১৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর এডিবি ঋণ হিসেবে দেবে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ২০১১ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এক পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের কথা ছিল। তবে এবার তা সংশোধন করে উভয় পাশেই সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ২০১১ সালের শিডিউল রেটের ভিত্তিতে আগেরবার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছিল। এখন তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ জন্য চুক্তি মূল্য পরিবর্তন হয়েছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ছে।

উল্লেখ্য, মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস সড়ক নির্মাণের ফলে দুই পাশে যাতায়াতের জন্য কালিয়াকৈর, মির্জাপুর, পাকুল্লা বাজারের কাছে সাথিয়াচারা, বাওই খোলা, করটিয়া হাটবাইপাস, বাসাইল টিজংশন ও টাঙ্গাইল বাইপাস এলাকায় সাতটি আন্ডারপাস নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ও পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কের উভয়পাশে ৬৫ কিরোমিটার ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। আবার ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সেতুও নির্মাণ করতে হবে। এর বাইরে ১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। আর জমি অধিগ্রহণ বাড়বে সাড়ে ৩৪ হেক্টর।