নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়া কোনো দলকে নির্বাচনে আনতে নির্বাচন কমিশনকে মধ্যস্থতা করার সুযোগ সংবিধান দেয়নি বলে জানিয়ে সে পথে না হাঁটার কথা বলেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেছেন, অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা গোনা নয়, তাদের কাজ ভোটের আয়োজন করা, সেটিই তারা করবেন। গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কমিশনের এই অবস্থান তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি দাবি পূরণ না হলে ভোট বর্জনের আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনও এই দাবিতে বর্জন করেছিল তারা। ভোট প্রতিহত করার চেষ্টায় ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে হয় সেই নির্বাচন। বিএনপি ও সমমনারা এবারও বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভোট ‘হবে না, হতে দেওয়া হবে না।’
অন্যদিকে সরকার বলছে, ভোটে কেউ না আসতে চাইতে পারে। বিএনপি না এলেও অনেক দল ভোটে আসতে প্রস্তুত। সব দল ভোটে না এলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি নাÑএ প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনে সব দল কখনও অংশ নেয় না। অতীতেও নেয়নি। অনেক দল আছে, এর মধ্যে নিবন্ধিত ৪৪টি দল। সবাই তো অংশগ্রহণ করবে না। কেননা ভোটে অংশ নিতে অনেক সক্ষমতার বিষয় আছে।’ কমিশনারের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথোপকথনে ভোট নিয়ে আন্তর্জাতিক নানা চেষ্টার প্রসঙ্গও উঠে আসে। ২০১৪ সালের সেই নির্বাচনে সব পক্ষকে আনতে দেশি-বিদেশি নানা তৎপরতা ছিল। এবারও পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলো চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এক প্রশ্নে আলমগীর বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলে সমঝোতার আগ্রহ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নেই।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজনের কংগ্রেসম্যানের বৈঠক কমিশনের কাজে কোনো প্রভাব ফেলছে না বলেও জানান তিনি। আলমগীর বলেন, ‘ওই বিষয়ের সঙ্গে আমাদের কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা রাজনীতিবিদদের বিষয়। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তারা আলাপ করছেন। নির্বাচন কমিশনের কাজ কমিশন করছে।’ বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আনতে নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগ নিতে পারে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট বলা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কী। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। সেটা অসাংবিধানিক হবে। আমরা যখন শপথ নিয়েছি, বলেছি যে, সংবিধান মেনে চলব। সংবিধানে যা নেই তা কমিশন করতে পারে না।’
সংকট সমাধানে বিদেশিরা সেখানে চেষ্টা করছে, সেখানে কমিশন সংলাপের উদ্যোগ নিতে পারবে না, এমনও তো বলা নেইÑএকজন গণমাধ্যমকর্মীর এমন মন্তব্যের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাজ কী, তা সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং সংসদ যদি আইন করে কোনো দায়িত্ব দেয়। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবে না।’
অন্য এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা হবে।… যখন যে নির্বাচনের সময় আসবে যথাসময়ে সে নির্বাচনগুলো করা হবে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকার পদ্ধতি ও নির্বাচন ব্যবস্থা কী, সেটা সংবিধানে বলা রয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু ইসির নয়; সরকার, ভোটার, প্রার্থী সবার দায়িত্ব। আইনে যেটুকু বলা আছে ততটুকু ইসির দায়িত্ব।’