নির্মাণকাজে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) চালু হলে তা রাজধানীর যানজট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে। এটি তৈরি হলে সরকারের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান হিসেবেই স্বীকৃতি পাবে। বিশেষ ধরনের বাস চলাচলের জন্য রাস্তায় বিশেষ লেন চালু করা হবে। এর আগে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বৃহত্তর ঢাকার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) তৈরি করে। উদ্দেশ্য ছিল জনসংখ্যার আধিক্যের জন্য ঢাকাবাসীর পরবহন সংকট নিরসন করা। অসহনীয় যানজটে পেশাজীবী-কর্মজীবীদের কী পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, সেটি সবার জানা।

সমস্যা থেকে উত্তরণে ঢাকার আশপাশের এলাকা বা উপশহরগুলোকে আধুনিক গণপরিবহন যেমন এমআরটি বা বিআরটি দিয়ে সংযুক্ত করা হলে এ শহরের ওপর চাপ কমবে। অর্থনৈতিকভাবে এটির সুফল পাওয়া যাবে। এসব বিবেচনায় বৃহত্তর ঢাকায় পাঁচটি এমআরটি এবং দুটি বিআরটি লাইন স্থাপনের  প্রস্তাব করা হয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় সোমবার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের একটি গার্ডার লঞ্চার ভেঙে চীনের দুই কর্মীসহ চারজন আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার রাতে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে পলওয়েল মার্কেটের কাছে এ প্রকল্পের একটি পিয়ার ক্যাপ ধসে পড়ে, তবে সেখানে কেউ হতাহত হননি। গতকাল পত্রপত্রিকায় এ-সংক্রান্ত যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে প্রতীয়মান হয় এটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হতে পারত। হয়তো রাতে সংঘটিত হওয়ায় বড় ক্ষতি হয়নি। এর ছবি দেখে যে কেউ শিউরে উঠবেন।

কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়ম অনুযায়ী ডিটেইল্ড ডিজাইন ও আর্থিক প্রাক্কলনের সংশোধন ও হালনাগাদকরণ এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য  প্রাথমিক কাজগুলো যেমনÑসামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। দুর্ঘটনার ছবি দেখেই মনে হয়, এটির কাজ নিয়মানুযায়ী চলছে না।

নির্মাণ প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সরকারি পরিপত্র পরিপালনেও সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক নন। প্রকল্পের পরিচালক প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করছেন কি না, আমাদের জানা নেই। এর জন্য কেউ না কেউ অবশ্যই ব্যক্তিগত দায়ী। তিনিসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

সংস্থাপ্রধানসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে প্রকল্প এলাকা আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক, আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করার কথা। তাই দায় এড়াতে পারেন না তারাও। আজকাল সরকারি নির্মাণে একটি গৎবাঁধা সাইনবোর্ড পথচারীদের নজর কাড়েÑসাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। এটি এখন নিছক তামাশা হিসেবেই পরিগণিত হবে। প্রকল্পের আওতায় নির্মীয়মাণ, নির্মিত স্থাপনা/অবকাঠামোগগুলোয় ব্যবহার্য-ব্যবহৃত উপকরণে গুণগত মান উপযুক্ত পরীক্ষাগার কর্তৃক নিয়মিত পরীক্ষা করা গেলে স্থাপনা টেকসই হবে।

সব নির্মাণে পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮-এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি যথাযথভাবে অনুসরণের ব্যবস্থা নেয়া গেলে নির্মাণ চলাকালে কিংবা নির্মাণশেষে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। নির্মাণকাজে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা গেলেই প্রত্যাশিত স্থাপনার আয়ুষ্কাল বজায় থাকবে।