Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 11:05 pm

নির্মাণব্যয় ন্যায়সঙ্গত করতে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিন

আমাদের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় কিংবা লোপাট হওয়ার অভিযোগ পুরোনো। সড়ক-মহাসড়ক, সেতু-উড়াল সেতুর মতো সব বড় অবকাঠামো নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। কোনো সমালোচকের তথ্য নয়, সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পর্যবেক্ষণ কিংবা সংসদীয় কমিটির মূল্যায়ন যাচাইয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে।

রেলপথ নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগ তো নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের গড় ব্যয় ৩১ কোটি টাকা হলেও বাংলাদেশে এটি এর কয়েকগুণ। নির্মাণব্যয়ে বড় তারতম্যের বিষয়ে জানতে ২০১৭ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর রেলপথ নির্মাণব্যয়ের তুলনামূলক প্রতিবেদন চেয়েছিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ওই সময় চলমান প্রকল্পের কিলোমিটারপ্রতি রেলপথ নির্মাণে কোথাও ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা, আবার কোথাও ৪৮ কোটি টাকা। ওই সময় বলা হয় রেললাইন নির্মাণের স্থান নির্বাচন, সরঞ্জাম কেনা, স্থানের ধরনভেদে ব্যয়ের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে ব্যবধানের যৌক্তিকতা এবং স্বার্থান্বেষী মহল সুবিধা নিচ্ছে কি না, তা তদন্ত করে দেখার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ওই সুপারিশ অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মনে করার যৌক্তিক কারণ নেই। এর দৃষ্টান্ত হলো গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘অস্বাভাবিক ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে যমুনা রেল সেতু’ শীর্ষক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, যমুনা নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে পৃথক (বঙ্গবন্ধু) রেল সেতু। ২০১৬ সালে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। গত ৫ এপ্রিল সেতুটি নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় সাত হাজার ৪৭ কোটি টাকা বা ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এতে সেতুটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে অন্যান্য রেল সেতুর কয়েকগুণ।

কোনোভাবেই নির্মাণ প্রকল্পগুলোয় অতিরিক্ত ব্যয় থামানো যাচ্ছে না। অনেকে বলেন, এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলে নির্ধারিত ব্যয়ে ও সময়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব। অবশ্য গতকাল শেয়ার বিজের আরেকটি প্রতিবেদন আশার আলো দেখায়Ñনতুন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের রাশ টানছে সরকার।

ভূ-প্রকৃতির ভিন্নতায় বিভিন্ন দেশের অবকাঠামোর নির্মাণব্যয়ে ভিন্নতা থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যয় বেড়ে যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে। সরকার শূন্য সহনশীল অবস্থানে গেলে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেসব কারণ দেখিয়ে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা উচিত। সময় সময় অগ্রগতি মূল্যায়ন ও নজরদারি থাকলে হুট করে ব্যয় বেড়ে যেত না। সুপারিশ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সংসদীয় কমিটি সে বিষয়েও জবাব চাইতে পারে। কোনো ধরনের যোগসাজশ ও কারসাজির কারণে ব্যয় বাড়ালে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে।