নিলাম দ্রুত করতে সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমানে ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিউস। তবে আমদানিকারকরা সময়মতো খালাস না করায় বন্দরের ইয়ার্ডে জমেছে প্রায় ১০ হাজার কনটেইনার। নির্দিষ্ট সময় শেষে এসব কনটেইনার কাস্টম নিলামের কথা থাকলেও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে তা দ্রুত করতে পারছে না। অতিরিক্ত কনটেইনার জটের ফলে হ্যান্ডলিং বাধাগ্রস্ত হয়ে অপারেশনাল জটিলতা তৈরি হয়। এতে জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম বেড়ে গিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ
সমস্যার সমাধানে সশস্ত্র বাহিনীর কাছে লোকবল সহায়তা চেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চবক সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমদানিকৃত কনটেইনার আমদানিকারক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (সাধারণ পণ্যের কনটেইনারের ক্ষেত্রে ৩০ দিন এবং পচনশীল কনটেইনারের ক্ষেত্রে ৭ দিন) খালাস করা না হলে তা কাস্টম আইন অনুযায়ী নিলামের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে বাই পেপারে হস্তান্তর করে থাকে। প্রচলিত নিয়মে শুল্ক কর্তৃপক্ষের নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সময় লাগে বিধায় এ ধরনের কনটেইনারগুলো বন্দর ইয়ার্ডে পড়ে থাকে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই আমরা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কারে চিঠি দিয়েছি। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরে রক্ষিত নিলামযোগ্য কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য তিন বাহিনী হতে জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও) পর্যায়ের কর্মকর্তা ডেপুটেশনের মাধ্যমে পদায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি এনবিআর বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা নিলামযোগ্য কনটেইনার দ্রুত কায়িক পরীক্ষা ও নিষ্পত্তির জন্য ১০০ জন রাজস্ব কর্মকর্তার পদায়ন করছে। তারা এলে আশা করি, সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা লাগবে না। এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বন্দর উল্লেখ করেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিলাম কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং নিলাম কার্যক্রম গতিশীল করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে ২৫ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়। এসব কর্মকর্তা গত চার মাসে মোট ১৬৮১ বক্স কনটেইনার ইভেন্ট্রি করে; যা পর্যাপ্ত নয়।

বর্তমানে বন্দর অভ্যন্তরে নিলামযোগ্য কনটেইনার রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। কিন্তু শুল্ক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা চলমান গতিতে ১০ হাজার কনটেইনার কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে এক বছরেরও অধিক সময় লাগবে। আর এসব কনটেইনার নিলাম সম্পন্ন হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরে রক্ষিত নিলামযোগ্য কনটেইনার নিষ্পত্তির কার্যক্রমে আশু কোনো সুরাহা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে রক্ষিত নিলামযোগ্য কনটেইনারের ইভেন্ট্রি কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য তিন বাহিনী হতে জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও) পর্যায়ের কর্মকর্তা ডেপুটেশনের মাধ্যমে পদায়ন করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার দায়িত্বে থাকা সাকিব হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, নিলামের কনটেইনার দ্রুত কায়িক পরীক্ষা করার জন্য এনবিআর ৭৯ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পদায়ন করছে। তার এর আগেও বিভিন্ন সময় নিলাম শাখার দায়িত্ব পালন করেছিল। এনবিআর পর্যাক্রমে এই ৭৯ জন এলে বর্তমানে যে ২৫ জন কাজ করছে, তারা চলে যাবে। তবে নিয়মিত যেসব কর্মকর্তা ছিলেন তারও এক সঙ্গে করজ করবেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে (২৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার রয়েছে ৩৮ হাজার ৬৬৬টি তার মধ্যে নিলামযোগ্য কনটেইনার রয়েছে ৯ হাজার ৫২৯টি। একই সঙ্গে নিলামযোগ্য গাড়ি রয়েছে ১৬৯টি।