Print Date & Time : 19 August 2025 Tuesday 12:42 am

নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে যথার্থ মন্তব্য

গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হক, বিপিএলসির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আজিজ খানসহ নীতিনির্ধারকরা পুঁজিবাজার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের প্রায় সবার কথাকেই প্রশংসার সঙ্গে আমলে নিতে হয়। তবু নীতিনির্ধারকদের মাঝে অগ্রাধিকার, পত্রিকার শিরোনামের স্থান সংকুলানজনিত বিপত্তি ও খবরটির গুরুত্বের ভিত্তিতে ওই সেমিনার ঘিরে গতকালের শেয়ার বিজে পরিবেশিত খবরের শিরোনাম ছিল ‘করপোরেট ট্যাক্স পুঁজিবাজারবান্ধব নয়: অর্থমন্ত্রী’। ঘটনাটি বিরল প্রথমত এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে, সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সাধারণত এমন বক্তব্য আসে না। সিংহভাগ ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকে ঘটনার এমন একটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, যাতে করে অনেক পাঠকই মনে করে বসতে পারেন বাস্তবতা সম্পর্কে মোটেও ওয়াকিফহাল নন তারা। অথচ বুধবারের ওই সেমিনারে অর্থমন্ত্রীসহ সবার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, তাদের আয়ত্তেই আছে ইস্যুগুলো। সেখান থেকে প্রাপ্ত মন্তব্যগুলো অধিকতর বিশ্লেষণের জন্য একটা স্বতন্ত্র তালিকাই প্রস্তুত করা যায়: ১. সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ যথেষ্ট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে বটে, তবে সামগ্রিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের বৈসাদৃশ্য দৃশ্যমান। ২. ২০১০-১১ সালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা এলেও প্রত্যাশিত স্বস্তি অর্জনে সংস্কারমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ৩. যেখানে প্রতিবেশী ভারতে বিদেশি পোর্টফোলিওতে লেনদেনের হার মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে পরিমাণটি পাঁচ শতাংশ। ৪. জিডিপিতে ভারতীয় পুঁজিবাজারের অবদান ৪০ শতাংশ পেরিয়েছে বহু আগে, সেখানে ২২ শতাংশেই যেন আবদ্ধ হয়ে পড়েছি আমরা। ৫. শেয়ারবাজারে গভীরতা, তারল্য ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের অভাব তীব্র। এসবের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা আরেকটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, সেটি হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মাঝে সমন্বয়ের ঘাটতি। এখন সবার প্রত্যাশা, ওই সেমিনারে উত্থাপিত বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে আমলে নিয়ে নীতিনির্ধারণে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটাবেন তারা।

ওইদিন আলোচিত বিষয়গুলোর মাঝে নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য করণীয় বিদ্যমান বলেই আমরা মনে করি। অবদান রাখার বেলায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে ভারতীয় পুঁজিবাজারের ব্যবধান কীভাবে কমানো যায় কিংবা পোর্টফলিওতে বিদেশি লেনদেন কোন উপায়ে বাড়ানো সম্ভব, সেটি নির্ণয় করতে হবে নীতিনির্ধারকদের। আবার শেয়ারবাজারকে ‘পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা’য় ফেরাতে কোন কোন পদক্ষেপ নিলে ভালো হয়, সেগুলোও চিহ্নিত করবেন তারা। ওই সেমিনার থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতি পরামর্শ হলো, তারা যেন নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ান। লক্ষ করা দরকার, এ নিয়ে অভিযোগ পুরোনো। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, তারপরও কেন জানি স্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মাঝে সুসমন্বয় পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এদিকে অনেক ব্যবসায়ীই মনে করেন, সমন্বয়ের ওই ঘাটতিতে মাঝেমধ্যে অধিক করের ফাঁদে ফেঁসে যান তারা। তেমন কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে তাদের কর/শুল্ক দিতে হচ্ছে কয়েকবার। একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দাবি এর চূড়ান্ত মাশুল গুনতে হয় ক্রেতাকেই। এছাড়া কেউ কেউ মনে করেন, শেয়ারবাজারকে স্পর্শকাতর ও জটিল বিবেচনায় ঘাবড়ে গিয়ে এক্ষেত্রে অনেক সময় এমন সব নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যাতে বিপাকে পড়ে খোদ বাজারটিই। অনস্বীকার্য যে, পুঁজিবাজার জটিল ও স্পর্শকাতর। তবু আমরা জোর দেব, এক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ (যেমন করপোরেট ট্যাক্স) যেন যথাসম্ভব কম নেওয়া হয়। সেজন্য বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, যাতে বাজারের গভীরতা, তারল্য ও পণ্যবৈচিত্র্য বাড়ে। এতে নিয়ন্ত্রণের শৃঙ্খল কিছুটা শিথিল হবে বলেও ধারণা।