চিকিৎসাসেবী, জনহিতৈষী, শিক্ষাবিদ এবং শিল্পোদ্যোক্তা নীলরতন সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। নীলরতনের পিতা নন্দলাল সরকার ছিলেন যশোরের এক দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের সন্তান; তিনি পরবর্তী সময়ে খুলনার জয়নগরে বসতি স্থাপন করেন। নীলরতন সরকার ১৮৬১ সালের ১ অক্টোবর চব্বিশ পরগনা জেলার নেত্র এলাকায় জš§গ্রহণ করেন। ১৮৭৬ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করার পর নীলরতন সরকার ১৮৭৯ অথবা ১৮৮০ সালে ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে দেশীয় ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি ১৮৮৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং কিছুদিন একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৮৮, ১৮৮৯ এবং ১৮৯০ সালে যথাক্রমে এমবি, এমএ এবং এমডি ডিগ্রি লাভ করেন।
একজন স্বাধীন বেসরকারি চিকিৎসক হিসেবে নীলরতন সরকার তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং অচিরেই একজন সফল চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তার চিকিৎসা সম্মানী দুই রুপী থেকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৪ রুপী পর্যন্ত দাঁড়ায়। তিনি দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং উদার হস্তে খাদ্য ও ওষুধের ব্যবস্থা করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেন, যা পরবর্তীকালে ১৯০৪ সালে কলকাতা মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব পিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অব বেঙ্গল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখায় দেশীয় ভাষার মাধ্যমে চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হতো, আর অপর শাখায় ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদি শিক্ষা দেয়া হতো। প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা পরে ১৯১৬ সালে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজের মর্যাদা লাভ করে এবং এর নাম দেয়া হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ। পরবর্তীকালে ১৯১৭ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে উৎসাহের কারণে তিনি বিভিন্নভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ১৯২৪ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট টিচিং অন আর্টস-এর সভাপতি এবং ১৯২৪ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট টিচিং অন সায়েন্সের সভাপতি হন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় নীলরতন সরকারকে যথাক্রমে ডিসিএল ও এলএলডি ডিগ্রি প্রদান করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪০ সালে নীলরতন সরকারকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নে নিজের আগ্রহের কারণে নীলরতন সরকার বিভিন্ন শিল্প প্রকল্প, যেমন রাঙ্গামাটি টি কোম্পানি, ন্যাশনাল সোপ ফ্যাক্টরি এবং ন্যাশনাল ট্যানারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় অর্থায়ন করেন। ১৯৪৩ সালের ১৮ মে তার মৃত্যু হয়।
[সংগৃহীত]