নেপালের পোখারা বিমানবন্দর নির্মাণে চীনের অর্থায়ন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ঋণের বোঝা কমাতে নেপালের পোখারায় একটি ব্যয়বহুল বিমানবন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করেছে চীন। অর্থের অভাব, রাজনৈতিক ডামাডোলসহ নানা কারণে এই বিমানবন্দর বানাতে পারেনি নেপাল। খবর: ইকোনমিক টাইমস।

অভিযোগ উঠেছে, এই বিমানবন্দর নির্মাণে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। এমনকি ভূ-প্রাকৃতিক যেসব পরীক্ষা করা জরুরি ছিল, সেগুলোও করা হয়নি। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে তেমন একটা আয়ও করতে পারছে না নেপাল।

বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়ে গেলে চীন তাকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও নেপাল তা প্রত্যাখ্যান করে। পরিণতিতে এ বিমানবন্দর এখন চীন ও ভারতের কূটনৈতিক যুদ্ধের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

চলতি সপ্তাহে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ১০ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। নেপালসহ আরও অনেক দেশ সেই উৎসবে যোগ দিয়েছে। চীনের এসব বিদেশি উন্নয়ন প্রকল্প অধিক ব্যয় ও নি¤œমানের জন্য সমালোচিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কারণে ঋণগ্রহীতা দেশগুলো ঋণের বোঝায় চাপা পড়ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে চীনের কোম্পানি টাকা বানাচ্ছে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর আদতে ক্ষতি হচ্ছে।

পোখারার এই বিমানবন্দর নির্মাণ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিনেমাকের প্রকৌশল সংস্থা চায়না সিএএমসি। তারা ভবনের সব উপাদান ও মাটি সরানোর যন্ত্রপাতি চীন থেকে এনেছিল। বিমানবন্দরের নকশাও চীনের। এছাড়া যত ধরনের নিরাপত্তা ও শিল্পপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তার সবই চীনের। নেপালে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন সং বলেছেন, এই বিমানবন্দর চীনের প্রকৌশল মানের মুক্ত প্রকাশ।

সিএএমসি এই বিমানবন্দর নির্মাণকাজের শর্ত নিজেদের মতো করে তৈরি করে নিয়েছে, এমনকি নেপাল সরকারের তত্ত্বাবধানকেও তারা পাত্তা দেয়নি। এ পরিস্থিতিতে নেপাল এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ে বিপদে পড়েছে। একদিকে এ বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যয় অনেক বেশি হয়েছে, আরেক দিকে বিমানবন্দরের এত পরিমাণে যাত্রী আসছে না যে তার পক্ষে চীনের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।

চীন ২০১২ সালে এই বিমানবন্দর নির্মাণে ঋণ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজি হয়। কিন্তু তার এক বছর আগে সিএএমসির প্রস্তাবে সমর্থন দিতে চীনের অর্থমন্ত্রী এক সমঝোতা স্মারকে সই করেন, যদিও দরপত্রের প্রক্রিয়া তখন শুরুই হয়নি। এই প্রক্রিয়ায় শুধু চীনের কোম্পানিগুলো দরপত্রে অংশ নেয়ার অনুমতি পায়।

সিএএমসি ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ পায়। তবে নেপাল সরকারের প্রাথমিক অনুমান ছিল, খরচ হবে এর অর্ধেক। ফলে দ্বিগুণ খরচে চীনের কোম্পানিকে কাজ দেয়ায় নেপালের অনেক রাজনীতিক ক্ষিপ্ত হন। তাদের অভিযোগ, এই দরপত্র প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করা হয়েছে। এরপর সিএএমসি দর ৩০ শতাংশ কমিয়ে ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নামিয়ে আনে। এরপর নেপাল ও চীন ২০১৬ সালে এই বিমানবন্দর নির্মাণে ২০ বছরের চুক্তি সই করে। ২০১৭ সাল থেকে বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে অর্থ ব্যয় হবে, তার এক-চতুর্থাংশ বিনা সুদে ঋণ হিসেবে নেবে দেশটি। বাকি অর্থ চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়া হবে। ২০২৬ সাল থেকে এই ঋণ পরিশোধ শুরু করার অঙ্গীকার করেছে নেপাল।

প্রাথমিক বাজেটে নেপাল সরকারের জন্য ২৮ লাখ ডলার আলাদা করে রাখা হয়েছিল পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার জন্য। সিএমএসি নির্মাণকাজে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে কি না, এটা দেখাই পরামর্শকের কাজ। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর নেপাল সরকার ও সিএমএসি সেই বরাদ্দ কমিয়ে ১০ হাজার ডলারে নামিয়ে আনে। বাকি অর্থ তারা অন্য খাতে ব্যয়ের জন্য নিয়ে যায়।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিমানবন্দর উদ্বোধন করেন। কিন্তু চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে এর নাম জড়িয়ে যাওয়া নেপালের জন্য কাল হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনায় নেপাল ভারতের চক্ষুশূল হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় বিমান সংস্থা পোখারাগামী ফ্লাইট চালু করেনি। সে কারণে নেপালও বিপদে পড়েছে।