নেশা এখন শুধু বস্তুগত নয়

রিয়াজুল হক: জরুরী প্রয়োজনে বের হয়েছিলাম। রাস্তা ফাঁকা। একজন অল্পবয়সী রিক্সাওয়ালা ছেলে রাস্তার পাশে রিক্সা রেখে মোবাইল নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,যাবে কিনা?

ছেলেটি তার হাতের স্মার্টফোন আমাকে দেখিয়ে বলল, দুই জিবি কেনার জন্য মেসেজ পাঠাইলাম। টাকাও কাইটা রাখছে। কিন্তু এমবি আসে নাই। তাই কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিতাছি। কিন্তু কাজ হইতাছে না।

আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তুমি যাবে? ছেলেটি উত্তর দিল, উঠেন।

প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে ছেলেটি বলতে লাগলো, এমনিতেই রিক্সার প্যাসেঞ্জার খুব কম। আয় অনেক কইমা গেছে। এখন দুই জিবি যদি চালু না হয়, তাহলে টাকা পানিতে গেল। আবার কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়া টাকা নষ্ট হইল। রিক্সা চালাতে চালাতেই ছেলেটি তার এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে বলল, মেসেজ পাঠাইছি, টাকাও কাইটা রাখছে কিন্তু নেট তো চালু হয় নাই। টাকা কাইটা রাখলে এমবি দেবে না, এইটা কেমন কথা। আচ্ছা আমি প্যাসেঞ্জার নামাইয়া আইতাছি। তুই থাকিস।

ছেলেটার কথা শুনে বুঝতে পারছিলাম, ইন্টারনেট হয়তো তার খুবই জরুরী। তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, জিবি দিয়ে কি করবা? কোন জরুরী কাজ আছে?

ছেলেটি উত্তর দিল, সকালের থাইকা এখনো এফবি’তে ঢুকতে পারি নাই।

এই উত্তর শোনার পরে আমার আর কোন নতুন প্রশ্ন ছিল না। তারপরও জিজ্ঞেস করলাম, রিক্সা কি তোমার নিজের নাকি ভাড়া করা? ছেলেটি জানালো, ভাড়ার রিক্সা। দিনে আড়াইশো টাকা ভাড়া দিতে হয়।

বুঝতে পারছি, নেশা এখন শুধুমাত্র বস্তুগত নয়। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেমস আমাদের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে একটা আসক্তির মত হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই নিজেদের খাবারের টাকা বাঁচিয়ে মেগাবাইট কিনছে। এরপর সারাটা দিন ৫/৬ ইঞ্চি মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বুঁদ হয়ে থাকছে। ঘুমের সময় ছাড়া পাঁচটা মিনিটও মোবাইলের স্ক্রিনের থেকে চোখ সরছে না। ভালোই তো, ভালো না!

লেখকঃ যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক