Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 10:34 pm

নোবিপ্রবিতে ভর্তিচ্ছুদের মেধাক্রম তৈরি পদ্ধতিতে বৈষম্য

আব্দুল কবীর ফারহান, নোবিপ্রবি: প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য এসএসসি ও এইচএসসির ফলকে ১০০ নম্বর ধরে মেধাক্রম তৈরি করবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(নোবিপ্রবি)। এমন ঘোষণা দিয়ে ভর্তি আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এতে অনেক প্রার্থী বৈষম্যের শিকার হবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ভর্তি পরীক্ষা স্কোরের মূল্যয়ন ঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভর্তিচ্ছুদের।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেধা তালিকা তৈরি করা হবে ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে। এতে ১০০ নম্বর ভর্তি পরীক্ষা ও ১০০ নম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের ভিত্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ইউনিটভিত্তিক নির্ধারিত আবেদন ফি ৬০০ টাকা এবং আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু করে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন চলবে।

২০২০-২১ সেশন প্রথমবারের মতো জিএসটি গুচ্ছ ভুক্ত স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এতে কভিড পরিস্থিতিতে বোর্ড পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় অটোপাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এবারের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশ নেয়া অন্য সেশনের শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে উত্তীর্ণ হয়।

মেধাক্রম তৈরির এ পদ্ধতিতে বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এক অংশের। ভিন্ন পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ হওয়া উচ্চ মাধ্যমিকের দুই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই জিপিএ নম্বর অনেক বড় ব্যবধান তৈরি করবে বলে তাদের অভিযোগ। তাদের মতে, জিপিএ মার্ক স্বল্প হলে ভর্তি পরীক্ষা স্কোর ভালোভাবে মূল্যয়ন পেত, এক্ষেত্রে জিপিএ নম্বর মেধা তালিকায় বেশি দূরত্ব তৈরি করত না। এখন জিপিএ নম্বর অত্যধিক রাখার ফলে মেধা তালিকায় এটি তাদের পিছিয়ে দেবে। এটি ভর্তি পরীক্ষা স্কোরের মূল্যায়ন কমিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভর্তিচ্ছুদের।

জিএসটি ভর্তি পরীক্ষায় ৬২ দশমিক পাঁচ স্কোর পেয়েছে তানভীর শরিফ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, জিপিএর ওপর ১০০ নাম্বার রাখা আমি অযৌক্তিক মনে করছি। এখানে মূলত জিপিএর নম্বর দিয়েই মেরিট পজিশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। ৬২ দশমিক ২৫ পেয়েও আমি ৪৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি শুধু জিপিএর ওপর ১০০ নম্বর রাখার কারণে। তাহলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার যৌক্তিকতা কি? তাছাড়া এবার যেহেতু এইচএসসিতে অটোপাস দিয়েছে এতে সঠিক মেধার মূল্যায়ন হয়নি, তাই বিতর্কিত রেজাল্টের ওপর নাম্বার রাখা আদৌ ঠিক মনে করিনি।

নুর মোহাম্মদ আতিক নামে আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০ এর বেশি জিপিএ মার্ক রাখে নাই সেখানে নোবিপ্রবি ১০০ ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জিপিএ বেজড করে ফেলবে নাকি? এখন একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় পেল ৩০, তার জিপিএ ১০০ আরেকজন পরীক্ষায় পেল ৫০, তার জিপিএতে রয়েছে ৭৫ তাহলে ৩০ পাওয়া শিক্ষার্থী এগিয়ে গেলো না? এটা তো চরম বৈষম্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ফলো করবে কেন? চলতি বছর অটোপাস, ‘ভূরি ভূরি’ জিপিএ ফাইভ, এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।

জিপিএ ১০০ নম্বর যৌক্তিক উল্লেখ করে নোবিপ্রবির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বলেন, ভর্তি কমিটি আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কভিডের কারণে শিক্ষার্থীরা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও এসএসসি পরীক্ষার সময় তারা পড়াশোনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে সেই দিক বিবেচনায় আমরা জিপিএকে গুরুত্ব দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের আলোচনায় এটি যৌক্তিক মনে হয়েছে বিধায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন ভর্তিচ্ছুদের প্রতিক্রিয়ায় কমিটি মনে করলে বিষয়টি নিয়ে আবার বসে আলোচনা করবে। সেখানে কমানো দরকার মনে হলে পরিবর্তন হবে, অন্যথায় এটিই থাকবে।

অটোপাস হলেও তাদের জিপিএ ভ্যালুলেস নয়, উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, আগের রেজাল্টের ভিত্তিতে তাদের এইচএসসির রেজাল্ট হয়েছে। যেহেতু তারা আগে ভালো করেছে এখানেও তাদের ফল ভালো হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী ভর্তি কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে ভর্তি কমিটি ভালো বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম। তবে যেহেতু শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তাদের বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।