নোয়াখালী বিআরটিএ’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) নোয়াখালী কার্যালয় এখন অনিয়ম, দুর্নীতি আর দালালদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ও ফিটনেস পরীক্ষাসহ প্রায় সব কাজই করতে এসে হয়রানির পাশাপাশি প্রতারণার শিকারও হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় বিআরটিএ কার্যালয়। ওই কার্যালয় থেকে গ্রাহক যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিবন্ধন, যানবাহনের রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের সেবা নেন। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফি ৫১৮ টাকা। লাইসেন্স ফি দুই হাজার ৬০০ টাকা। আর  মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএ’র কিছু কর্মচারী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ছয় থেকে আট হাজার এবং মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছেন। নোয়াখালী বিআরটিএতে মাস্টাররোলে চাকরি করছেন কজন কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক হয়রানি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ।

সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে দালালদের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আর দালালরা অফিস খরচের নাম করে ফাইলপ্রতি অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিটি যানবাহন ফিটনেসের জন্য অতিরিক্ত পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদি যানবাহনের কাগজপত্র ঠিক না থাকে, তাহলে চুক্তির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে ফিটনেস দেওয়া হয়।

নোয়াখালীর এক সিএনজি অটোরিকশার মালিক নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি ১২ হাজার ৮৬ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ে যান। গত এক মাসে তিনি চার দফা কাগজপত্র নিয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছেন; কিন্তু কেউ তার কাগজ জমা রাখেননি। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ঘুরছেন; কিন্তু নিবন্ধন করার কাগজ জমা নিচ্ছেন না কেউ।

সদরের আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য গত মার্চে বিআরটিএ কার্যালয়ের এক সিল মেকানিক তার কাছ থেকে আট হাজার টাকা আদায় করেন। সদর উপজেলার আবুল কালাম অভিযোগ করেন, মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এখানকার জনৈক দালালকে তিনি অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও তিনি এখনও লাইসেন্স হাতে পাননি। এখন সেই দালাল বলছেন, আরও অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দিতে হবে।

সুবর্ণচর উপজেলার জাহেদ হোসেন জানান, মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দালালের সহায়তা না নেওয়ায় তাকে একাধিকবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রাথমিক কাজ ও যাচাই-বাছাই শেষে অ্যাসেসমেন্ট সিøপ নিয়ে ফি প্রদানের পর মোটরসাইকেলটি পরিদর্শনের জন্য বিআরটিএ অফিসে হাজির করা হলে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ স্টাফ জানান, তার চেচিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বর ভুল হয়েছে। এই ভুল সংশোধন করতে আবারও তাকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। এরপর সব কাজ শেষে তারা জানায়, মোটরসাইকেলের নাম ভুল হয়েছে। আবারও টাকা জমা না দিলে এ ভুল সংশোধন করা যাবে না। অথচ আমি নিজে গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর এবং মোটরসাইকেলের নাম আবেদনে সঠিকভাবে লিখেছি।

কবিরহাট উপজেলার জহিরুল ইসলাম জানান, মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়। পরে ফরমের সঙ্গে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাগজপত্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা দিতে হয়। তারপরও দালালের শরণাপন্ন হয়ে অতিরিক্ত টাকা না দিলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও মেলে না শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স।

নোয়াখালী বিআরটিএ কার্যালয়ের এক দালাল জানায়, অতিরিক্ত টাকার একটি অংশ প্রতি মাসে ভাগবাটোয়ারা হয় অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার মধ্যে। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় শতভাগ পাসের গ্যারান্টি দিয়েই টাকা হাতিয়ে নেয় দালালচক্রের সদস্যরা। আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে মাসের পর মাস ঘুরেও সমস্যার সমাধান হয় না। 

নোয়াখালী বিআরটিএ কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, কার্যালয়ে জনবল কম। তার মধ্যে অফিস প্রধানের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) পদটি দীর্ঘদিন ছিল শূন্য। বর্তমানে এ সমস্যা নেই। অফিস প্রধানের স্বাক্ষর ছাড়া কোনো কাগজপত্র ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে সেবা প্রত্যাশীরা মাঝেমধ্যে হয়রানির শিকার হন।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ কার্যালয়ের উপপরিচালক আতাউর রহমান অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, অফিসে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। কাজের চাপও বেশি। সে কারণে দীর্ঘদিন থেকে অতিরিক্ত চার-পাঁচজন লোক সহায়তা করে আসছে।