নৌযান চলাচলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিন

‘পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনও নিখোঁজ ৪০’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন গতকাল দৈনিক শেয়ার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনটিতে মৃতের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত হƒদয়বিদারক। একটু অসাবধানতার কারণে ঝরে গেল পঞ্চাশের অধিক তাজা প্রাণ। এ মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন দুর্ঘটনা আর সংঘটিত না হয়, সে বিষয়ে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।

সাধারণত সড়কে যানবাহন পরিচালনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নৌযানের ক্ষেত্রেও লাইসেন্স নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে কেবল বড় আকারের ও দূরপাল্লার নৌযানগুলোই নিবন্ধন নিয়ে থাকে। তারপরও দূরপাল্লার অনেক নৌযানও নিবন্ধনের আওতার বাইরে রয়েছে বলে নানা সময়ে গণমাধ্যমে আসে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ বিষয়টি দেখভাল করে। কিন্তু সংস্থাটির তদারকি কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। এক্ষেত্রে তাদের জনবল সংকট একটি কারণ হতে পারে। তবে এর বাইরেও নানা কারণ রয়েছে। অনেক সময় মাঝারি ও বড় আকারের যাত্রীবাহী নৌযানও পানিতে ডুবে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএকে অবশ্যই ভূমিকা পালন করতে হবে।

মোটরসাইকেলে কতজন আরোহী উঠতে পারবে, সে বিষয়ে আইনে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ নৌযান স্থানীয় পর্যায়ে নির্মিত হয় এবং এগুলোর ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদিত নকশা অনুসরণের বাধ্যবাধকতা নেই। তাছাড়া ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে অনেকে ছোট ছোট নৌযান তৈরি করেন। কিন্তু সেগুলোর ওজন পরিবহন সক্ষমতা সম্পর্কে নির্মাতা ও মাঝির তেমন কোনো ধারণা নেই। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নৌযানের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ওজন বহন করা হয় এবং এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। কাজেই নৌযান তৈরির ক্ষেত্রে এগুলোর আয়তন ও নকশার বিষয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা আবশ্যক। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী কোন আকারের নৌযানে কতজন যাত্রী পরিবহন করা যাবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রটোকল তৈরি করে তা পরিপালন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি এসব নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করার জন্য নিয়মিত ভিত্তিতে তদারকি করতে হবে। এসব কার্যক্রম জোরদার করা না গেলে নৌযান দুর্ঘটনা মৃত্যুর মিছিল রোধ করা সম্ভব হবে না। আর বিভিন্ন ধরনের উৎসব ও পার্বণকে কেন্দ্র করে এমন দুর্ঘটনা বেশি সংঘটিত হয়। বিশেষ করে ঈদের সময় বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনার খবর বেশি পাওয়া যায়। পঞ্চগড়ের দুর্ঘটনাও ঘটেছে একটি উৎসবকে কেন্দ্র করেই। কাজেই উৎসবের সময়গুলোতে মানুষ যাতে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নৌযানে না ওঠেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।