ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি ধামইরহাটের কৃষক

আব্দুল্লাহ হেল বাকী, ধামইরহাট (নওগাঁ): নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। একই সঙ্গে ন্যায্য দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার উচ্চ ফলনশীল গম বীজ বপন করায় ফলন তুলনামূলক বেশি হয়েছে। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। গমের ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় ভবিষ্যতে গম চাষ বাড়বে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে ধামইরহাটে প্রায় এক হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। বেশিরভাগ জমিতে কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত বারি ৩০ ও ৩৩ রোপণ করেছে। এছাড়া বারি ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩২ জাতের গম চাষ করা হয়। এবার আবহাওয়া গম চাষের অনুকূলে ছিল। এছাড়া কৃষি বিভাগ সঠিক তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়ায় গম গাছে কোনো রোগ হয়নি। বর্তমানে পুরোদমে গম মাড়াই চলছে। প্রতি একরে উচ্চ ফলনশীল রাবি ৩০ ও ৩৩ জাতের গম প্রায় ৪০ মণ হারে ফলন হয়েছে।

উপজেলার উমার ইউনিয়নের অন্তর্গত অমরপুর গ্রামের গম চাষি মো. আব্দুল গোফফার বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তিনি এবার বারি ৩৩ জাতের গম বীজ ও সার সহায়তা পেয়েছেন। বীজ সংরক্ষণের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাকে বস্তা, বস্তা সেলাই মেশিন ও আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র দেয়া হয়েছে। গত বছরও তিনি গম উৎপাদন করে বীজ সংরক্ষণ করে প্রতি মণ দুই হাজার টাকা দরে স্থানীয় কৃষকদের কাছে বীজ বিক্রি করেন। তার গ্রুপে ১৫ জন কৃষক মিলে চার একর জমিতে গম চাষ করেছেন। এ জাতের গমের শীষ অনেক লম্বা ও দানা মোটা। এছাড়া এ জাতের গম গাছে ব্লাস্ট হয় না। প্রচণ্ড তাপ সহনীয় হওয়ায় সহজে চাষাবাদ করা যায়। একর প্রতি তার ফলন হয়েছে প্রায় ৪০ মণ। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ গম এক হাজার ২০০ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। তবে তারা গম সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে বীজ হিসেবে বিক্রি করবেন। এতে স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের গম বীজ দেয়া যাবে।

গমের বাম্পার ফলন ও গম বীজ ব্লক পরিদর্শন করতে সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুল ওয়াদুদ ও প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক অমরপুরে আসেন। তিনি নমুনা গম কর্তন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. শাপলা খাতুন বলেন, বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে সরকার কৃষককে গম চাষে বেশি উৎসাহিত করছে। বোরো ধান চাষ করতে প্রচুর পানি সেচ দিতে হয়। পক্ষান্তরে মাত্র তিন থেকে চারবার পানি সেচ দিতে হয় গমে। বর্তমানে বারি ৩০ ও ৩৩ জাতের উচ্চ ফলনশীল গম বীজ আসায় কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এ গম চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। একই জমিতে আমন ধান কাটার পর গম ও পরে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে বর্ষালী ইরি সহজে চাষ করা যায়। এতে কৃষক এক জমিতে বছরে তিন ফসল ফলাতে পারছেন। তাছাড়া গম চাষে উদ্ধুদ্ব করতে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলার ৬৪ জন কৃষককের মাঝে গম বীজ ও বীজ সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। উপজেলায় আটটি কৃষক গ্রুপ রয়েছে। প্রতি গ্রুপে ১৫ জন কৃষককে উন্নতমানের গম বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ, গম বীজ ও বীজ সার সহায়তা দেয়া হয়। পাশাপাশি বীজ রাখার বস্তা, বস্তা সেলাইয়ের জন্য মেশিন ও আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র দেয়া হয়েছে। কৃষকরা এসব বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে যেন স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বীজ হিসেবে বিক্রি করতে পারেন তাই এ সহায়তা করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বর্তমানে এলাকার কৃষকরা স্থানীয়ভাবে গম বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করছেন। ভবিষ্যতে এ এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমিতে গম চাষ হবে।