সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম:চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন রপ্তানির জন্য একাধিকবার সিআইপি খেতাব পেয়েছেন। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ, অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ফান্ড ব্যবস্থাপনার অভাব, করপোরেট সংস্কৃতি চর্চার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দেশের একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় স্থান পায় সাদ মুসা গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান। এবার এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাদ মুসা হোমটেক্স অ্যান্ড ক্লথিং, মাহমুদ সাজিদ কটনস, এমদাদ এতিমিয়া স্পিনিং মিলস এবং রোকেয়া স্পিনিং মিলস ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় মোট এক হাজার ১৮৫ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। আর এ খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাদ মুসা হোমটেক্স অ্যান্ড ক্লথিংয়ের এক হাজার ৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, মাহমুদ সাজিদ কটনস ১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, এমদাদ এতিমিয়া স্পিনিং মিলস ৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং রোকেয়া স্পিনিং মিলসের ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এসব ঋণের বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় বন্ধকিতে আছে গাজীপুর এবং চট্টগ্রামের কুলগাঁও ও নাসিরাবাদে মোট দুই হাজার ৭৬৬ শতক জমিসহ স্থাপনা। এসব জমি ও স্থাপনা আগামী ২৫ জুলাইয়ের ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হবে। এতে আগ্রহীরা দরপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
অন্যদিকে এনআরবিসি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সাদ মুসা গ্রুপের সায়মা সামিরা টেক্সটাইল ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নেয়। প্রথম দিকে নিয়মিত থাকলেও গত ৫ জুন ব্যাংকটিতে খেলাপি হয়ে পড়ে। এ সময়ে পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে ৩০২ শতাংশ জমি ও স্থাপনাসহ বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। নিলাম কার্যক্রম আগামী ৮ জুলাই ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখায় অনুষ্ঠিত হবে।
সাদ মুসা গ্রুপ ও ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা জানা যায়, ১৯৮২ সালে পোশাক খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সাদ মুসা গ্রুপ। চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ফেব্রিক্স, স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা চালুর ধারাবাহিকতায় আনোয়ারা উপজেলায় স্থাপন করেন রপ্তানিমুখী শিল্প পার্ক। তবে শুরু থেকে নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত শিল্প পার্কটি চালু করা যায়নি। বৃহৎ এ গ্রুপের ব্যবসায় পরিচালনায় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো ঋণ নেন মহসিন। অধিকাংশ ব্যাংক পাওনা আদায় নিয়ে চিন্তিত। শুধু তাই নয়, এ ব্যবসায়ীকে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পরিচালক পদ ছাড়তে হয়। এছাড়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও আয়কর রিটার্নে বিদেশে বিনিয়োগের তথ্য গোপনের অভিযোগও রয়েছে।
খেলাপি ঋণ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পদস্থ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, সাদ মুসা গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান আমাদের ঋণ খেলাপি। তাদের কাছে খেলাপি পাওনার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে চেক প্রত্যাখ্যানের একাধিক মামলা করা হয়েছে। মহসিন সাহেবের গ্রুপের যা অবস্থা; তা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কঠিন হবে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলাও করেছে। তিনি ব্যাংকের পেমেন্ট না দিয়ে বিদেশি ফান্ড এনে লোন শোধ করবেনÑএমন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সাদ মুসা গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে নেই। এসব বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি।
গতকাল বিকালে ঋণ খেলাপি বিষয়ে সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।