ন্যূনতম মজুরি ১৫০০ রিঙ্গিত করছে মালয়েশিয়া

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ার সরকার দেশটির কর্মীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন এক হাজার ৫০০ রিঙ্গিত (৩০ হাজার ৮৫২ টাকা) করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির সব খাতের কর্মীদের সামগ্রিকভাবে এ মজুরি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব। খবর: মালয় মেইল।

গত শনিবার ‘জামিনকেরজা কেলুয়ারগা মালয়েশিয়া ইনিশিয়েটিভ’ ও ‘জামিনকেরজা কেলুয়ারগা মালয়েশিয়া ক্যারিয়ার কার্নিভাল, ২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি। কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে (কেএলসিসি) এ ক্যারিয়ার উৎসবের আয়োজন করা হয়।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মজুরি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মিনিস্ট্রি অব হিউম্যান রিসোর্সেস (এমওএইচআর) ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে কংগ্রেস অব ইউনিয়নস অব এমপ্লয়িজ ইন দ্য পাবলিক অ্যান্ড সিভিল সার্ভিসেস (কুয়েপ্যাকস) ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে এমওএইচআর।

তিনি বলেন, আমরা সব কর্মীদের ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও আমরা আলোচনা করছি। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন বেতনকাঠামোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, তবে অনেকেই পারবে না। বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই বেতন বাড়াতে সক্ষম হবে না। তাই তাদের সঙ্গে সমঝোতার পথ খোলা রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি শঙ্কিত এজন্য যে, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ব্যয়ভার বহন করতে না পারে, তাহলে তারা কর্মীদের ছাঁটাই শুরু করবে। এতে বেকার কর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ দিকটায়ও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে এটাও ঠিক যে, আমরা নিয়োগদাতাদের সুরক্ষা দিচ্ছি না। আমরা চাই প্রকৃত নিয়োগদাতা ন্যূনতম বেতন এক হাজার ৫০০ রিঙ্গিত করবেন এবং এটাই সর্বোত্তম বলে মনে করি।

এমওএইচআর মজুরি বাড়ানোর এ ঘোষণা নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। পরে তারা সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করবে। এরপর অনুমোদিত হলে বাস্তবায়ন করা হবে।

মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার জীবনযাত্রার ব্যয়ভার সম্পর্কে অবগত আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) উদ্যোক্তাসহ মাইক্রো খাতসংশ্লিষ্টরা নতুন প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী তাই বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য কর্মীদের সাহায্য করা। তাহলে যেসব কর্মী পর্যাপ্ত বেতন পাচ্ছেন না এবং যারা বর্তমান বেতন দিয়ে টিকে থাকতে লড়াই করছেন, তাদের সহায়তা করা হবে। আমরা সবদিক বিবেচনায় রেখেছিÑআমরা নিয়োগদাতাদের স্বার্থও দেখছি এবং একই সময় তাদের মতামতও জানতে চাই।

সম্প্রতি মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি সারাভান গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছর শেষ প্রান্তিকে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হবে। বর্তমান ন্যূনতম মজুরি এক হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ রিঙ্গিত করা হবে বলে জানান তিনি।

মালয়েশিয়া সরকার-নির্দেশিত ন্যূনতম মাসিক মজুরি চালু রয়েছে। দেশটির কোনো কর্মীকে এই বাধ্যতামূলক ন্যূনতম বেতনের চেয়ে কম দেয়ার বিধান নেই। নিয়োগকর্তারা ন্যূনতম মজুরি দিতে ব্যর্থ হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়।

এদিকে বিদেশি কর্মীদের জন্য ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিবেশী নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়া (ইপি) ও আধা দক্ষ কর্মীদের (এস পাস) জন্য দেশটির অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওং সম্প্রতি ঘোষণা দেন। এতে নিয়োগদাতারা চ্যালেঞ্জে পড়বেন এবং দেশটির শ্রমবাজার ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানাননি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। উপরন্তু বিশ্বে যে কয়েকটি দেশ ন্যূনতম মজুরিদানের শীর্ষে রয়েছে তার মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। আরও সুখবর, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশটি সীমান্ত খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে চাঙা হবে দেশটির অর্থনীতি।