নড়াইলে আমনক্ষেতে পোকার আক্রমণ

সুলতান মাহমুদ, নড়াইল: নড়াইলের তিন উপজেলায় আমনক্ষেতে বাদামি ঘাসফড়িং পোকার আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। বাদামি ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকা রস চুষে খাওয়ায় দ্রæত শুকিয়ে যাচ্ছে ধানগাছ। ফলে কোথাও কোথাও পুড়ে যাওয়ার মতো দেখাচ্ছে ধানক্ষেত। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এ ধরণের ক্ষতিকে হপার বার্র্ন বলা হয়।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় ৩০ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার ৩৯০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষ করেছেন। ধান-চালের দাম বৃদ্ধিতে এ জেলার কৃষকরা নিজ আগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন চাষ করেছেন। ধানের শীষ বের হওয়ার আগে কিংবা শীষ বের হওয়ার পরে কারেন্ট পোকা হিসেবে পরিচিত এ পোকা ধানক্ষেতে আক্রমণ করলে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।

লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া-হেচলাগাতি গ্রামের কৃষক মোশারেফ হোসেন জানান, এ বছর তিনি প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। গত চার দিন আগে জমিতে পোকার আক্রমণ লক্ষ করেন। পোকা লাগার কারণে জমির ধান নষ্ট হতে শুরু করেছে। এছাড়া নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের আমন ধানের জমিতে পোকা লাগার কথা জানিয়েছেন।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, জেলার কোনো কোনো এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। এছাড়া বেশিরভাগ জমিতে শীষ বের হচ্ছে। গত তিন থেকে চার দিন আগে আমন ধানে বাদামি ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ লক্ষ করা গেছে। মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিদের কাছ থেকে ধানে পোকার আক্রমণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোকা দমনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে আমনক্ষেত রক্ষা করতে কী কী নিয়ম পালন করতে হবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে ইতোমধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত কীটনাশক সফসিন, মিপসিন, প্লেনাম, পাইরাজিন গø্যামোর, ইমিটাফ দ্রæত স্প্রে করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষেতের পাকা ধান দ্রæত কেটে নেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (১৭ অক্টোবর) পর্যন্ত সদর ও কালিয়া উপজেলায় মাত্র তিন দশমিক পাঁচ হেক্টর জমি কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত হলেও এর মধ্যে তিন দশমিক এক হেক্টর জমিতে কীননাশক ও অন্য কলাকৌশল প্রয়োগ করে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস জানান, নড়াইলের চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের নাওরা, নূরমোহাম্মদনগর (মহিষখোলা), মাইজপাড়া ইউনিয়নের পচামাগুরা, কাঁঠালবাড়িয়াসহ কয়েকটি এলাকার ধানক্ষেত গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) পরিদর্শন ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কীটনাশক প্রয়োগ করায় আক্রান্ত জমি পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেছে। এছাড়া যেসব জমির ধান পোকায় আক্রান্ত হয়নি সেসব জমির মালিকদের এবং কৃষকদের আগাম সতর্কবার্তা ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষাকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পোকার এ ধরনের আক্রমণ থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় তারা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।