অফিস ছুটি থাকার কারণে বাসায় মনজুরুল পত্রিকা পড়ছিলেন। ছোট ভাই জহির রুমে ঢুকেই প্রশ্ন করল, ভাইয়া কয়েকটি পণ্যের উপর আমি একটা জরিপ গবেষণা (Survey Research) করতে চাই।
মনজুরুলঃ ভালো কথা। করে ফেল। তোর স্যাম্পল সাইজ কত হবে অর্থাৎ কত জনের উপর জরিপ করবি?
জহিরঃ বেশি না। কয়েকটি সেক্টর ভাগ করে মোট ২০০ জন।
মনজুরুলঃ ঠিকভাবে করতে পারলে জরিপ গবেষণার মাধ্যমে ইউনিক ধারণা পাওয়া যায়। জহিরঃ সেজন্যই তো করতে চাচ্ছি।
মনজুরুলঃ তবে এক্ষেত্রে পক্ষপাত করার সুযোগ আছে।
জহিরঃ সেটা কিভাবে?
মনজুরুলঃ জরিপ করার জন্য তুই তো কিছু প্রশ্ন তৈরি করবি?
জহিরঃ সেটা তো করতেই হবে।
মনজুরুলঃ তোর এই প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরদাতার উত্তর ঠিক করে দেয়া যায়। অর্থাৎ তুই যেমন উত্তর চাচ্ছিস, সেরকমই উত্তর পাবি। এটা নির্ভর করবে তোর প্রশ্নের উপর।
জহিরঃ কিভাবে?
মনজুরুলঃ মনে কর, তুই হরতাল পছন্দ করিস না। এখন জরিপের জন্য তোর প্রশ্ন যদি এরকম হয়, আপনি কি মনে করেন হরতাল দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর?
জহিরঃ সবাই ক্ষতিকর বলবে।
মনজুরুলঃ এবার মনে কর, তুই হরতালের পক্ষে কিছু চাচ্ছিস। হরতালের দিন সকালে কোন পথচারীকে যদি তুই জিজ্ঞেস করিস, রাস্তায় কোন জ্যাম নেই, কালো ধোঁয়া নেই। আপনার হাঁটাহাঁটি করতে কোন সমস্যা হচ্ছে?
জহিরঃ সমস্যা না হবার কথাই বলবে।
মনজুরুলঃ ঠিক তাই। আবার মনে কর, তুই প্রশ্ন করলি, আপনি কি মনে করেন সারাদিন মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ রাখলে চোখের সমস্যা হয়? সবাই কি বলবে?
জহিরঃ চোখের সমস্যা হবার কথাই বলবে। বাহ্, তুমি তো ঠিকই বলেছ। উত্তর তো আমিই মোটামুটি উত্তরদাতার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছি।
মনজুরুলঃ এরপরেও যদি দেখিস কোন উত্তরদাতা তোর মন মত উত্তর দেয়নি, তাহলে সেই উত্তরদাতার উত্তর বাদ দিয়ে নতুন আরেক জনের মতামত নিবি। এগুলোই হচ্ছে পক্ষপাতমূলক জরিপ গবেষণা। অর্থাৎ তুই যেরকম ফলাফল পেতে চাচ্ছিস, সেটা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিস। তুই কি এইরকম কোন জরিপ করতে চাচ্ছিস?
জহিরঃ না, আমি কোন পক্ষপাতমূলক জরিপ গবেষণা করব না।
মনজুরুলঃ তাহলে নতুন কিছু পাওয়া সম্ভব। ঠিক আছে, শুরু কর।
লেখক-রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক