পঞ্চগড়ে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, বেশি আক্রান্ত শিশুরা

প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: উত্তরের হিমাঞ্চল জেলা পঞ্চগড়ে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগের প্রকোপ। এসব রোগে কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। প্রতিদিন ব্যাপকহারে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ভর্তি হচ্ছেন রোগী। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে অনেককে।

হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, এ শীত মৌসুমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই জেলার পাঁচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রধান চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই শিশু। ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুদের বেড রয়েছে মাত্র ১৬টি। কিন্তু প্রতিদিনি এখানে তার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর কারণে বেড খালি না থাকায় অনেকেই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। ভালো চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই পার্শ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবনের কাজ প্রায় শেষ। এটি চালু হলে সেবার মান আরও বাড়বে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। গত জানুয়ারির ৩১ তারিখ পর্যন্ত জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে ৯১৪ জন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ও নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, বাকি ১১৩ জন বয়স্ক। এছাড়া সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া, চর্ম ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই শীতজনিত রোগ সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। শীতজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। এ সময়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে বলে পরামর্শ চিকিৎসকদের।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আমিনা বেগম জানান, আমার ছয় মাস বয়সী আব্দুল্লাহর তিন দিন ধরে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা ও বমি। বাড়িতে চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ।

জেলা সদরের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার আসমা খাতুন বলেন, আমার মেয়ের বয়স প্রায় এক বছর। চার দিন ধরে ডায়রিয়া কমছে না। চিন্তায় আছি। একই কথা বলেন লাঠুয়া পাড়ার রাহেলা। তিনি জানান, তার ছেলে আমির হামজার তিন দিন ধরে ডায়রিয়া। চিকিৎসা নিলেও কমছে না। এরকম জোসনা খাতুনের আট মাস বয়সী ছেলে তাসিন, মোতালেব হোসেনের ৯ মাস বয়সী রিহান ও রিংকি খাতুনের ১০ মাস বয়সী আল মোজাহিদ ডায়রিয়ায় ভুগছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এখানে অন্যান্য জেলা থেকে শীত বেশি হয়ে থাকে, যার কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এসব রোগে বেশিরভাগ শিশু ও বয়স্ক মানুষ কষ্ট পায়। প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমাদের এসব রোগের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে। আমরা ও আমাদের নার্সরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, দেশের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছেন অনেকেই। বাচ্চাদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সার্বিক দিক থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা দিন-রাত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের শীতে যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, বেশ কিছু দিন শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পর আজ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে শীতের তীব্রতা অনেকটা কমেছে। তবে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। বিশেষ করে এ জেলা হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দুই পর্বতের সন্নিকটে হওয়ায় এখানে শীতের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে।