পণ্যের যৌক্তিক দাম নিশ্চিতে কোনো ধরনের ছাড় কাম্য নয়

ভালো, ভেজালমুক্ত, মানসম্মত ও খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বা বাজারজাত করা পণ্যের দাম একটু বেশি হয়। কেননা এগুলোর উৎপাদন খরচও বেশি। পণ্যের গ্রাহকই এর বিপণন করে। পণ্য ভালো হলে গ্রাহকই আত্মীয়-পরিচিতজনদের কাছে প্রচার করেন। মানসম্মত পণ্যের বাজার পেতে কারসাজি করতে হয় না। গতকাল শেয়ার বিজে কয়েকটি পণ্যের দামে কারসাজির জন্য ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। খবরে জানা যায়, বাজারে চাল, আটা-ময়দা, ডিম, মুরগির মাংস ও টয়লেট্রিজ পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশনের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, চালের জন্য রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, বেলকন গ্রুপ, সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড; আটা-ময়দার জন্য সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ; ডিমের জন্য প্যারাগন পোলট্রি, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ, কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম; মুরগির জন্য কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড; টয়লেট্রিজ পণ্যের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকÑমোট ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যদিও একই প্রতিষ্ঠানের নাম এ তালিকায় একাধিকবার এসেছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা আছে কমিশনের।

প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫-তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। ধারা ১৬-তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।

কয়েক মাস ধরে দেশে চাল, তেল, আটা, ডিম, মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্ট ও টুথপেস্টের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে, যেখানে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে।

চালের বাজারে কয়েক বছর একচেটিয়া এগিয়ে আছে রশিদ। প্রতিটি ডিমে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ মুদ্রিত থাকায় প্যারাগন পোলট্রির নাম এখন অনেকেই জানেন। সাবান, টুথপেস্ট ও প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের কোনো না কোনো পণ্য ব্যবহার করেন না, এমন মানুষ কমই আছেন। অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোও সুপরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারকারীদের অনেকে সম্মানিত ও সচেতন ব্যক্তি হিসেবে সমাজে অভিজাতের মর্যাদা পেয়ে থাকেন। সাধারণত ব্যক্তিরা কম প্রতারিত হন। অথচ কারসাজিতে পড়ে বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনছেন তারাও।    

মানসম্মত পণ্য ভোক্তাসাধারণের কাছে পৌঁছাতে প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সাধারণ মানুষ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েই পণ্যের গুণ যাচাই করে। অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতে চায় না তারা। বেশি দামে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনবে, এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে না। এটি শিল্পের বিকাশ ও ন্যায্যতার পরিপন্থি। শুধু মামলা নয়, সব কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, প্রতিযোগিতা কমিশন এতে ন্যূনতম ছাড় দেবে না।