Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 4:38 pm

পণ্য পরিবহনে ব্যয় বাড়ল ৫০ শতাংশ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সরকার জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। এ ঘোষণার জেরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর সেবা মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)। এরপর লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়িয়েছে। আর ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি ভাড়াও ঘোষণা ছাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবহন খরচ। অথচ কোনো অংশীজনদের এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি।

আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য-সংশ্লিষ্টরা বলেন, করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে ছিল অর্থনীতি। দেশের পোশাক খাতে রপ্তানির কার্যাদেশ ছিল ভালো। এছাড়া প্রচুর ভোগ্যপণ্য ও শিল্প পণ্য আমদানি ছিল। সবই ভালো চলছিল। হঠাৎ করে সরকার জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ল। আর এ ঘোষণার জেরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর সেবা মাশুল ২৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিকডা।

সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, মোট পাঁচটি খাতে গড়ে ২৩ শতাংশ হারে সেবা মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিপো ও বন্দরের মধ্যে কনটেইনার পরিবহন, আমদানি পণ্য কনটেইনার থেকে খালাস, কনটেইনার ওঠানো-নামানো, রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই ও ওজন মাপার মাশুল। আগে ২০ ফুট লম্বা কনটেইনার পরিবহনের মাশুল ছিল ১ হাজার ১৫০ টাকা। এখন ২৬৫ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি কনটেইনার থেকে পণ্য খালাসের মাশুল ৭ হাজার ৯৩০ থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ৭৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এরপর গত মঙ্গলবার ডব্লিউটিসি ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্য নৌপথে সবচেয়ে বেশি নেয়া হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মেঘনা, মুক্তারপুর, কাঁচপুর, আলীগঞ্জ ও নিতাইগঞ্জ এলাকায়। এসব জায়গায় প্রতি টন পণ্য পরিবহনের ভাড়া এখন ৪১৫ টাকা। তাতে ১৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ফলে টনপ্রতি পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে ৬২ টাকা ২৫ পয়সা। আর ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি ঘোষণা ছাড়া প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে পরিবহন চার্জ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে পণ্য পরিবহন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ল; যা রীতিমতো ব্যবসা পরিচালনায় চ্যালেঞ্জ।

এ বিষয়ে বিকডার সচিব মো. রহুল আমিন সিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে গাড়ি ও যন্ত্রের জ্বালানি খরচ যে বেড়েছে, তা সমন্বয় করতে ‘ফুয়েল সারচার্জ’ আরোপ করা হয়েছে। এখানে বাড়তি কোনো কিছু করা হয়নি।

অন্যদিকে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তেলের দাম সমন্বয় করার জন্য ১৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে ভাড়া টনে ৬২ টাকা ২৫ পয়সা বাড়ল। অর্থাৎ প্রতি কেজি কার্গোতে মাত্র ৬০ পয়সা, যা অন্যদের চেয়েও খুব কম।

যদিও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ডিকডার নতুন এ মাশুলের প্রভাব রপ্তানিতে ৯০ শতাংশ এবং আমদানিতে ২১ শতাংশ পণ্যে পড়বে। অর্থাৎ রপ্তানির কার্যক্রমে জড়িতরা সবচেয়ে বেশি ব্যয় বাড়বে। যদিও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো বা আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী সেবার মাশুল বাড়াতে হলে কমিটির মাধ্যমে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। অন্যদিকে নৌপথে খোলা ভোগ্যপণ্য ও শিল্পপণ্যের পরিবহন ব্যয় বাড়ছে। এ কারণে ভোক্তাদের ব্যয়ও বাড়বে। তবে ডিজেলের দাম বাড়ায় খরচ সমন্বয়ের বৈঠকে আমদানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন না। অর্থাৎ নিজেদের ইচ্ছামতো দর নির্ধারণ করছে! আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া সমন্বয় করা উচিত ছিল। আবার জ্বালানি খরচ যা বেড়েছে, তার চেয়ে ভাড়া বেশি বাড়ানো হয়েছে। এগুলো বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। এর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। আর এভাবে হলে বিনিয়োগ বাড়বে না।