Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 2:16 pm

পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতনের ধারা থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। নতুন বছরের মাঝখানে একবার বিরতি দিয়ে বাজার আবারও পতনের ধারায়। অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দর হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কমছে সূচক। এর জের ধরে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের বাজার মূলধন ক্রমে কমছে। এই নেতিবাচক প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসান। ফলে তাদের হতাশাও দিন দিন বাড়ছে।

সাম্প্রতিক বাজারচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে বাজারে বড় পতন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া এ ধরনের পতন স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে ঘুরেফিরে তারা বাজার পতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণকে দায়ী করছেন।

বাজারচিত্রে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ আগে বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা নেমে এসেছে চার লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায়। এ সময়ের মধ্যে বাজার মূলধন হ্রাস পেয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। কার্যদিবসের হিসাবে এ সময়ে প্রতিদিন গড় বাজার মূলধন কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।

এদিকে পতনের জের ধরে গত দুই সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ২৪১ পয়েন্ট। প্রতিদিন গড়ে সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ২৭ পয়েন্ট। দুই সপ্তাহ আগে সূচকের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ৫৬৮ পয়েন্টে। গতকাল তা নেমে এসেছে পাঁচ হাজার ৩২৭ পয়েন্টে। অন্যদিকে এ সময়ে লেনদেনও ৮০০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৮৮ কোটি টাকা।

ফের টানা পতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, ‘আমরা চাই বাজারের দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতা। হঠাৎ দু-চার দিন বাজার ভালো থাকল, আবার অস্বাভাবিক পতন নেমে এলোÑএমন পুঁজিবাজার আমরা চাই না।’ তারা বলেন, ‘গত বছর করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বেশিরভাগ সময়ই ডিএসইতে লেনদেন ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে ঘুরপাক খায়। পরবর্তীকালে লেনদেনে গতি পায়, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আবারও বাজারে পতন নেমে আসে, বর্তমানে যা চলমান রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘এই পতনের বিশেষ কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। তবে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা কিছুটা হলেও দায়ী। তারা যে কোনো কারণে প্যানিক হয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেন, যা ঠিক নয়। বাজারের যে কোনো বৈরী পরিস্থিতিতে তাদের ধৈর্যধারণ করা উচিত। তবে আমাদের দেশে এ ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম।’

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এটা সব দেশেই রয়েছে। তবে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া বড় পতন হলে তখন বিষয়টি ভাবনার কারণ হতে পারে। তবে এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যধারণ করতে হবে। কারণ এই সময়ে যদি তারা ভীত হয়ে শেয়ার বা ইউনিট ছেড়ে দেন, তাহলে পতন আরও ভারী হয়।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে রাসেল আহমেদ নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে বলা হচ্ছে, বাজার ভালো হবে। এ কারণে আমরাও ধৈর্যধারণ করছি। কিন্তু পুঁজিবাজারের কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। মাঝখান দিয়ে আমাদের লোকসানটাই ভারী হচ্ছে।