ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয় গত ২৫ জুন। পরের দিন সকাল থেকে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি। গত ৩০ ডিসেম্বর অর্থাৎ ছয় মাস পাঁচ দিনেই পদ্মা সেতুতে টোল আদায় ছাড়ায় ৪০০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর) সেতুটিতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৩৯৩ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। যদিও যানবাহন চলাচল শুরুর পরদিনই পদ্মা সেতুতে বাইক নিষিদ্ধ করা হয়।
টোল আদায়ে পিছিয়ে নেই যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতুও। উদ্বোধনের পর ২৪ বছর ছয় মাস ৭ দিনে সেতুটিতে টোল আদায় দাঁড়িয়েছে এর নির্মাণব্যয়ের দ্বিগুণ। ১৯৯৮ সালের ২৪ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে সাত হাজার ৫২৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যদিও সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, জুলাই মাসে পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু উভয় সেতু দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ যানবাহন পারাপার হয়। এতে ওই মাসে টোলও রেকর্ড পরিমাণ আদায় হয়। মূলত ঈদুল আজহার কারণে ওই মাসে গাড়ি চলাচল বেশি ছিল। এজন্য জুলাই মাসে সেতু দুটি দিয়ে গাড়ি পারাপারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
জুলাই মাসে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার ২০টি। এতে ওই মাসে সেতুটিতে টোল আদায় হয় ৭৮ কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার টাকা। আগস্টে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয় চার লাখ ১২ হাজার ৩০৬টি ও সেপ্টেম্বরে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৩টি। এতে টোল আদায় হয় যথাক্রমে ৬১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৫৯ কোটি পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
অক্টোবরে পদ্মা সেতুতে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ২৬ হাজার ১২৭টি, নভেম্বরে চার লাখ ৮৮৩টি ও ডিসেম্বরে চার লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৩টি। ওই তিন মাসে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা, ৬১ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে সেতুটিতে যানবাহন পারাপার হয় ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬১টি। আর টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩৯২ কোটি ৮২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
এদিকে উদ্বোধনের পর জুন মাসের শেষ পাঁচ দিন পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এতে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেতুটিতে টোল আদায় দাঁড়ায় ৪০০ কোটি ৫৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। যদিও চলতি অর্থবছর সেতুটিতে টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫৪৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৮০ হাজার ২৩৮টি। এতে ওই মাসে সেতুটিতে টোল আদায় হয় ৬৬ কোটি ৩২ লাখ ১১ হাজার টাকা। এটি বঙ্গবন্ধু সেতুর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টোল আদায়। আগস্টে সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার হয় পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪৩টি ও সেপ্টেম্বরে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৪৯৯টি। এতে টোল আদায় হয় যথাক্রমে ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ও ৪৯ কোটি ১০ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
অক্টোবরে সেতুটিতে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ১২৭টি, নভেম্বরে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ২১০টি ও ডিসেম্বরে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ২৮০টি। ওই তিন মাসে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫১ কোটি ৫৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৫৩ কোটি ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ও ৫৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন পারাপার হয় ৩৫ লাখ ৭৮ হাজার ২৪৮টি। আর টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩২৭ কোটি ৯৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দুই সেতু মিলিয়ে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭২০ কোটি ৭৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মা সেতুতে ৬৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বেশি টোল আদায় হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পদ্মা সেতুর তুলনায় ছয় মাসে প্রায় ৯ লাখ পাঁচ হাজার যানবাহন বেশি পারাপার হয়েছে।
তথ্যমতে, ঈদুল আজহার আগে ৮ জুলাই পদ্মা সেতুতে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে। ওইদিন সেতুটিতে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল চার কোটি ১৯ লাখ টাকা। এছাড়া তিন কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে জুলাই মাসে আরও আট দিন। তবে পরের আর কোনো মাসে সেতুটিতে টোল আদায় তিন কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেনি।
পদ্মা সেতুতে সবচেয়ে বেশি যানবাহন পারাপার হয় ২৬ জুন। ওইদিন সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৩১৬টি। তবে এর প্রায় ৭৫ শতাংশই ছিল বাইক। আর বাইক বন্ধের পর ৮ জুলাই পদ্মা সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার হয়। সেদিন সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৭২৩টি।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর ইতিহাসে একক সর্বোচ্চ টোল আদায় হয় ৭ জুলাই। ওইদিন সেতুটিতে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ৫৯৫টি। এর পরের দিনও সেতুটিতে টোল আদায় তিন কোটি টাকা ছাড়ায়। এছাড়া জুলাই মাসে ১৭ দিনে ও নভেম্বরে এক দিন সেতুটিতে টোল আদায় দুই কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করে।
তথ্যমতে, বিএনপির ঢাকায় সমাবেশ উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ওইদিন উভয় সেতুতেই সবচেয়ে কম যানবাহন পারাপার হয়েছে। ওই দিন পদ্মা সেতুতে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ৬৭১টি। আর টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। একই দিন বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৫০৫টি। এতে টোল আদায় হয় প্রায় এক কোটি চার লাখ ৬৭ হাজার টাকা।