Print Date & Time : 8 September 2025 Monday 2:03 pm

পদ্মা সেতুতে টোল আদায় ৮০৬ কোটি টাকা, যমুনায় ৬৭৫ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক দিন পর থেকে বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। ২৯৭ দিন বাইক বন্ধ থাকলেও পদ্মা সেতুতে বিদায়ী (২০২২-২৩) অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টোল আদায় হয়েছে। গত অর্থবছর এ সেতুতে টোল আদায় হয় ৮০৬ কোটি টাকার বেশি। আর দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতুতে গত অর্থবছর টোল আদায় হয়েছে ৬৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে টোল আদায় কমেছে।

যদিও যানবাহন পারাপারে পিছিয়ে নেই যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু। বিদায়ী অর্থবছরে এ সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে পদ্মা সেতুর চেয়ে অনেক বেশি। তবে টোলের হার কম হওয়ায় এ সময় বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয়েছে পদ্মা সেতুর তুলনায় বেশকিছুটা কম।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, গত অর্থবছরের জুলাই মাসে পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু উভয় সেতু দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে জুলাইয়ে সর্বোচ্চ টোল আদায় হলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে গত মাসে সবচেয়ে বেশি টোল আদায় হয়েছে। মূলত ঈদুল আজহার কারণে মাসগুলোয় ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় গাড়ি চলাচল বেশি ছিল। তবে একক দিন হিসেবে দুই সেতুতে গত ২৭ জুন রেকর্ড পরিমাণ টোল আদায় হয়।

গত অর্থবছর জুলাইয়ে পদ্মা সেতুতে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয় ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর বিদায়ী মাসে (জুন) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা টোল আদায় হয়। এছাড়া ঈদুল ফিতরের মাসে (এপ্রিল) তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকা টোল আদায় হয়। অন্যান্য মাসে টোল আদায় ৭০ কোটি টাকার নিচেই ছিল। তবে গত সেপ্টেম্বরে সর্বনি¤œ ৫৯ কোটি ছয় লাখ টাকা টোল আদায় হয়।

এদিকে উদ্বোধনের পর জুলাইয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে সবচেয়ে বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। এ সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার। আর এপ্রিলে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ও জুনে পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার যানবাহন সেতুটি দিয়ে পারাপার হয়েছে।

অন্যদিকে গত জুলাইয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল ৬৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এটি ছিল সেতুটির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ টোল আদায়। আর জুনে ৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে, যা সেতুটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ টোল আদায়। তবে অন্যান্য মাসগুলোয় বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় ছিল ৬০ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনি¤œ ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা টোল আদায় হয়।

যদিও বঙ্গবন্ধু সেতুতে জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সাত লাখ ৮০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। আর জুনে পারাপার হয়েছে সাত লাখ ৬০ হাজার। এছাড়া এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের মাসে ছয় লাখ ৫২ হাজার যানবাহন সেতুটি পারাপার হয়েছে। ওই মাসে টোল আদায় হয়েছিল ৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সূত্রমতে, গত ২৭ জুন বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয় তিন কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ওই দিন সেতুটি দিয়ে পারাপার হয় ৫৫ হাজার ৪৮৮টি। একই দিন পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয় ৪৩ হাজার ১৩৭টি। আর টোল আদায় হয় চার কোটি ৬১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের মাসগুলোয় বঙ্গবন্ধু সেতুতে সাধারণত যানবাহন পারাপার বেশি হয়। এতে ওই মাসগুলোয় এমনিতেই টোল আদায় বেশি হয়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর অনেকেই শখের বসে সেতুটি পারাপার হয়েছেন। ফলে প্রথম মাসে গাড়ি পারাপার ও টোল আদায় বেশি ছিল। পরের মাস থেকে মোটামুটি স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল করছে।

যদিও গত অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর সেতুটিতে টোল আদায় হয়েছিল ৭০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এটি বঙ্গবন্ধু সেতুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ টোল আদায়। অর্থাৎ গত অর্থবছর সেতুটিতে ২৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা টোল আদায় কম হয়েছে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে এর কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আগে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার বাস-ট্রাক বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘুরে যেত। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় সরাসরি তারা যেতে পারছে। এতে যানবাহন পারাপার কমেছে। ফলে টোল আদায়ও কমেছে।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ২৪ জুন। এরপর থেকে ২৫ বছরে সেতুটিতে টোল আদায় হয়েছে সাত হাজার ৮৭৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। যদিও সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সেতুটির নির্মাণব্যয়ের ২১০ শতাংশ টোল আদায় হয়ে গেছে। তবে সেতুটি নির্মাণে গৃহীত ঋণ এখনও পরিশোধ হয়নি।