শেয়ার বিজ ডেস্ক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি বদলে দেবে এবং অভাবনীয় সাফল্য নিয়ে আসবে। মন্ত্রী গতকাল পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত সিউইড মেলার উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। খবর: বাসস।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণের জনপদের উন্নয়নে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এ সেতুর কারণে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে এবং তাদের আধুনিক আকাক্সক্ষা পূরণ হবে। এ সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে এটি কখনোই সম্ভব হতো না’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ অন্যান্য কৃষিসামগ্রী রাজধানীতে পৌঁছানো বা রপ্তানির সুযোগ ছিল না। পদ্মা সেতু সংযোগের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত মাছসহ অন্যান্য কৃষিসামগ্রী দ্রæত ঢাকায় পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠা হবে। প্রক্রিয়াজাত করা সামগ্রী সরাসরি বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া যাবে। এ সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় আসা-যাওয়াই শুধু সহজ করবে না, এ অঞ্চলের অর্থনীতি সমৃদ্ধি করবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিউইডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সিউইড বা সামুদ্রিক শৈবাল বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন একটি সমুদ্রসম্পদ। মানুষের পুষ্টিচাহিদা মেটাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্বাদু খাবারের জোগান দিতে সিউইড অত্যন্ত সহায়ক। সিউইড প্রাপ্তির একটি বড় অঞ্চল কুয়াকাটা।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় সম্পদ সিউইড। খাদ্য, ওষুধশিল্প, প্রসাধনীশিল্পসহ নানা ক্ষেত্রে সিউইডের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে হবে। বিদেশে সিউইড রপ্তানির বড় বাজার রয়েছে, সেটা আমরা ধরতে চাই। সিউইড জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রগামী প্রতিটি নৌযানের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সমুদ্রগামী সব মাছ ধরার নৌযানে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন হচ্ছে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে মাছ ধরা নৌযানের অবস্থান জানা যাবে। ফলে অবৈধ উপায়ে এবং যত্রতত্র মাছধরা ট্রলার যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সমুদ্র থেকে টুনা-জাতীয় মাছ আহরণে মৎস্য অধিদপ্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বের অন্তত ৯০টি দেশে বাংলাদেশের মাছের চাহিদা রয়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেটজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে। বিশ্বের অনেক দেশে মাছ পাঠানো যাবে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
এর আগে বিএফআরআই’র আয়োজনে কুয়াকাটা পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সিউইড মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক।
সিউইড নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন বিএফআরআই’র বাংলাদেশ উপক‚লে সিউইড চাষ ও সিউইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক মো. মহিদুল ইসলাম।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ওবায়দুর রহমান ও কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, বিএফআরআই ও মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৎস্য খাতের অংশীজনরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।