পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাত্র চার ঘণ্টায় বরিশালে খুশি যাত্রী ও চালকরা

আরিফ হোসেন, বরিশাল: দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বেড়েছে পরিবহনে করে বরিশালে আসা যাত্রীদের চাপ। ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসতে পেরে আনন্দিত যাত্রীরা। স্বপ্নের সেতুর প্রথম দিনে যানবাহনের চাপ থাকায় টোল আদায়ে বিলম্বিত হয়। কিন্তু যাত্রীদের মাঝে ছিল ভিন্ন রকম আনন্দ। তারা পদ্মার পানির ওপর থেকে ভেসে নয়, এবারই প্রথম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকার জন্য পদ্মার পানির ওপর নির্মিত সেতু দিয়ে নিজ গন্তব্যে আসতে পেরে জীবনে এক নতুন আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান বরিশালে আসা বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা।

গতকাল রোববার বরিশালের কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে সর্বপ্রথম বেসরকারি এসি বাস সাকুরা পরিবহন ঢাকার সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে সকাল সাড়ে ৫টায় ৪০ যাত্রী নিয়ে বরিশালে যাত্রা শুরু করে। তবে টোলঘরে বিভিন্ন গাড়ির জ্যাম থাকার কারণে টোল নিতে প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়। ফলে তারা বরিশালে সোয়া ১২টায় যাত্রীদের নিয়ে এসেছে। ফলে টোল আদায়ের সময় বাদ দিলে মাত্র চার ঘণ্টায় তারা বরিশালে এসে পৌঁছে।

বরিশালে সবার আগে পদ্মা সেতু দিয়ে যাত্রী নিয়ে আসা সাকুরা পরিবহনের সুপারভাইজার নাসির হোসেন বলেন, বহু কষ্টের পর আজ আমরা মুক্ত হলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আজ আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী বড় একটি উপহার পেয়েছি, যার নাম পদ্মা সেতু। তিনি আরও বলেন, এখন আর যাত্রীদের খারাপ কথা শুনতে হবে না। ঢাকা থেকে সঠিক সময় যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে পৌঁছাতে পারব। ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্রিনলাইন এসি পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রথম দিনে ৪০ ও ২৭ সিটের ১২টি গাড়ি চালু করেছে।

বরিশাল গ্রিনলাইন কাউন্টার ইনচার্জ হাসান সরদার বাদশা জানান, তাদের মালিক ব্র্যান্ড এসকানিয়া ও ম্যান নামের গাড়িগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করেছেন। তারা প্রথম দিনে বরিশালে ১২টি গাড়ি দিয়ে সার্ভিস শুরু করেন। তাদের ৪০ সিটের এসি গাড়ির জনপ্রতি ভাড়া ৭৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। অপরদিকে ২৭ সিটের এসির সিটভাড়া জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক ইয়াসিন জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকার আরামবাগ থেকে ছেড়ে আসার পর তাদের গাড়ি ৪০ মিনিট টোলঘরে বিলম্ব করে, কিন্তু তার পরও তারা চার ঘণ্টায় বরিশালে আসতে পেরেছেন। অপরদিকে সরকারি বিআরটিসি কাউন্টারে ঢাকাগামী যাত্রীদের দেখা গেছে প্রচুর ভিড়। তারাও টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিআরটিসি’র ডিপোর ইনচার্জ ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিআরটিসি এবার বরিশাল-ঢাকার জন্য ১৪টি এসি সার্ভিস বাস চালু করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে দুটি, ভাণ্ডারিয়ায় একটি ও বরিশাল-ঢাকা রুটে ১১টি এসি বাস সার্ভিস চালু করেছে।

তিনি আরও বলেন, তারা বরিশাল থেকে ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়ার কারণে তাদের গাড়িতে যাত্রীচাপ বেশি রয়েছে।

অন্যদিকে বরিশালের নথুল্লাবাদসহ কাশিপুর সড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের বেগ পেতে দেখা গেছে।