পদ্মা সেতু প্রকল্প : জাজিরা সংযোগ সড়কে ব্যয় বাড়ছে সাড়ে ২৩ শতাংশ  

 

ইসমাইল আলী: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু। মূল সেতু ও নদীশাসন এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে নির্মিত জাজিরা সংযোগ নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ২৩ শতাংশ।  যদিও এটি নির্মাণ শেষ হয়েছে।

নির্মাণ শেষে জাজিরা সংযোগ সড়কের ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাবটি পাঠানো হয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। এতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর জাজিরা সংযোগ সড়ক ও অনান্য অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে যৌথভাবে ছিল মালয়েশিয়ার এইচসিএল ও বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর ৩৬ মাসে কাজটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের। সে সময় চুক্তিমূল্য ছিল এক হাজার ৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তবে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৫৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে ২৫৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। যদিও ১৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা কম দর প্রস্তাব করে কাজ নিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়, প্যাকেজটির আওতায় দুটি থানার নির্মাণ ব্যয় বাবদ বেড়েছে ৩৭ কোটি সাত লাখ টাকা, ফেরিঘাট সংযোগ সড়ক বাবদ ৪২ কোটি ১৫ লাখ, নরম মাটির ট্রিটমেন্ট বাবদ ১৫ কোটি ৮৬ লাখ, পাইলের গভীরতা ও টেস্ট বৃদ্ধি বাবদ সাত কোটি ৮৪ লাখ, নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি বাবদ ১৭৮ কোটি ৪৮ লাখ, প্রিলোডিং বাই সারচার্জিং বাবদ দুই কোটি ৩১ লাখ, পানি শোধনাগার, অতিরিক্ত আসবাব কেনা, আবাসিক ভবন নির্মাণ ইত্যাদি বাবদ দুই কোটি ৮৯ লাখ, সেতুর এক্সপানশান জয়েন্ট বাবদ ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ ছাড়া দুই বছর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২৮ কোটি ২৫ লাখ, ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধি বাবদ ১৪ কোটি ৩০ লাখ ও অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে ২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৩৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। তবে কিছু কিছু দফায় কাজের পরিমাণ কম হওয়ায় ১০৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ফলে সাকুল্যে জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ২৫৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে পদ্মা সেতুর বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, পদ্মা বহুমুখী সেতুর পাঁচটি প্যাকেজ রয়েছে। এগুলো হলোÑমূল সেতু, নদীশাসন, জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও নির্মাণ পরবর্তী ব্যবহারের জন্য সার্ভিস এলাকা নির্মাণ। মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার নির্মাণ শেষ হয়েছে গত বছর জুলাইয়ে। জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজও সম্প্রতি শেষ হয়েছে। মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ চলছে।

জাজিরা সংযোগ সড়কের আওতায় চার লেনের সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক ছাড়াও পাঁচটি ছোট ও মাঝারি সেতু, ২০টি কালভার্ট, তিন দশমিক ৩০ কিলোমিটার লিঙ্ক সড়ক, নতুন ফেরিঘাট থেকে ছয় কিলোমিটার সড়ক, আটটি আন্ডারপাস, ১২ কিলোমিটার দুই লেনের সার্ভিস সড়ক, টোলপ্লাজা দুটি থানা বিল্ডিং এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ কাজের জন্য দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) এ কাজের জন্য এ হাজার ৯০৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাই বর্ধিত ব্যয় ডিপিপির বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, জাজিরা সংযোগ সড়কের আওতায় কিছু নতুন কাজ যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া কিছু অংশের ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে প্যাকেজটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে তা যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সম্প্রতি এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাচ্ছে। তবে এ ব্যয় বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প সংশোধন করতে হবে না। প্রকল্পে বরাদ্দকৃত ব্যয় থেকেই এটি নির্বাহ করা যাবে।