শেয়ার বিজ ডেস্ক: গাজীপুর মহানগরের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার বিষয়ে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় গাজীপুর মহানগরীর হারিকেন এলাকায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র দাবি করেন, দুই মাস ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছেন। তবে তাকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জমি সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, জায়গা নিয়ে কেউ এলে আমরা উভয় পক্ষকে মিল করে দিয়েছি। কোনো জায়গা সম্পত্তিতে কোনো দিন হাত দেইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সম্পর্কে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাল অডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, মূল কথা বাদ দিয়ে আংশিক কথা দিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। কিছু লোক ২০১৩ সালের পর থেকেই আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পেছনে লেগে ছিল।
তিনি বলেন, যারা ঘরের ভেতর এসে অডিও করতে পারে, মানুষকে হত্যা করতে পারে, রাস্তায় গাড়ির মধ্যে আগুন দিতে পারে, তাদের বিচার হয়নি। বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মী, আওয়ামী লীগের কর্মী আমার।
এসময় মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাঁর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, অপরাধ করিনি। আমি এ সাধারণ সম্পাদক পদ চাই না, বাকি জীবন আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য ও সমর্থক হয়ে থাকতে চাই।’ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে এখানে একটি হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা মেয়র জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
গত ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাবও দেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘সুপার এডিট’ করা বলে বারবার দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম স্কুল থেকে কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জেলার ছাত্রলীগ ও পরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পান। এরপর গাজীপুরের সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৮ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মেয়র হন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজন কাউন্সিলর ছিলেন। তবে জেলা বা মহানগর আওয়ামী লীগের বড় কোনো নেতাকে সেখানে দেখা যায়নি।