সুদের ব্যবসা ও শোষণ: আরইবির মুনাফা বেড়েছে ৪৭%, লোকসানে ডুবছে পবিসগুলো’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। ৬১ জেলার ৪৬২ উপজেলার ৮৫ হাজার ৩৬৮ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পবিসগুলোর। তবে এসব সংগঠনকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। অভিযোগ রয়েছে নিয়ন্ত্রণের নামে মূলত চলে শোষণ ও সুদের ব্যবসা।জানা গেছে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার সঞ্চালন লাইন থেকে শুরু করে গ্রাহকের ঘরের মিটার পর্যন্ত সবই কেনে আরইবি। অথচ এগুলোর দাম পরিশোধ করতে হয় পবিসকে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আরইবি কিনে থাকে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি। নিম্নমানের এসব যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম দিয়ে পরিচালিত বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার দায়িত্ব পবিসগুলোর। তবে প্রতিবাদ করতে গেলেই মিলে বদলি, তিরস্কার বা শাস্তি।
এমন বঞ্চনা ও শোষণনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সংস্কারের দাবিতে পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করলে তাদের নানাভাবে দমনের চেষ্টা করে যাচ্ছে আরইবি। অনেক দিনের অভিযোগ সরকারের অনুদান হিসেবে আরইবিকে বিভিন্ন সময় তহবিল দিলেও তা ঋণ হিসাবে পবিসগুলো দিয়ে তা থেকে চলছে বছরের পর বছর সুদ আদায়। সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া নগদ তহবিলের ওপর তিন শতাংশ সুদ আদায় করছে আরইবি।
অনেকের মনে আছে ২০০৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুৎসংকট, উচ্চমূল্য ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। ওই মোট ১৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ট্রান্সফরমার চুরি হলে গ্রাহকদেরই খরচ বহন করতে হতো এবং বিদ্যুৎ না থাকলেও সংযোগ চার্জ ও মিটার ভাড়া দিতে হতো। এমন অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড বারবার আরইবিতে বোর্ড প্রস্তাব পাঠালে আরইবি তা নাকচ করে দেয়। ফলে সমাধান না পেয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন এবং পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। অবশেষে আরইবি চাঁপাইনবাবগঞ্জে মিটার ভাড়া বাতিল এবং ট্রান্সফরমারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সারা দেশের অন্য এলাকায় বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত মিটার ভাড়া বাধ্যতামূলক থেকে যায়।
এ রকম অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) আর আরইবির বিদ্যমান দ্বৈত ব্যবস্থাপনার সংকট যখন ঘনীভূত; তখনই জানা গেল আরইবি চুটিয়ে মুনাফা করছে আর লোকসানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পিবিএস। পবিস বোর্ড স্থানীয় গ্রাহকদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত এবং তাদের কাজ হলো নীতি প্রণয়ন, তদারকি ও সুপারিশ করা। পিবিএসের যদিও স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা, বাস্তবে আরইবি তাদের নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হলেও সমস্যা ছিল না যদি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি থাকত। তেমন হলে শোষণও থাকত না কেউ নিজেদের বঞ্চিত ভাবত না। আরইবি শুধুই মুনাফা করবে, আর পবিস লোকসান দেবে, এ বৃত্ত ভাঙতে হবে। সব খতিয়ে দেখে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।