জাকারিয়া পলাশ: একটি সরকারি ব্যাংকের মধ্যম সারির কর্তকর্তা মামুন চৌধুরী। সম্প্রতি টয়োটা এফ প্রিমিও ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি কিনেছেন তিনি। পার্ল রঙের গাড়িটি রিকন্ডিশন্ড। তিনি বলছিলেন, ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই, তাই রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কিনলাম। এ গাড়িও বাংলাদেশের রাস্তায় সযতেœ চালালে নির্বিঘ্নে এক যুগ পেরিয়ে যাবে।
মামুন চৌধুরীর মতো অনেকেই জাপানি পুরোনো গাড়ি কেনেন সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী বলে। আমদানিকারকদের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে প্রায় ২০ হাজার এমন পুরোনো গাড়ি আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। তবে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ও পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির আমদানির হার সে তুলনায় খুবই কম। গত বছরগুলোয় জাপান থেকে পুরোনো হাইব্রিড গাড়ির আমদানির সুযোগ না থাকায় মধ্যবিত্তরা এদিকে আগ্রহ দেখাতে পারেননি। তবে এবারের বাজেটে নতুন-পুরোনো নির্বিশেষে সব ধরনের হাইব্রিড গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে হাইব্রিড গাড়ি আমদানির সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমদানিকারকদের তথ্যমতে, ২০০৯ সালের বাজেট থেকেই হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে বাড়তি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে গত বছরগুলোয় শুধুই ব্র্যান্ড নিউ হাইব্রিড গাড়ির আমদানির সুযোগ ছিল, যা ব্যয়বহুল। ফলে সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন না আমদানিকারকরা। এবারের বাজেটে হাইব্রিড গাড়ির জন্য যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাতে নতুন হাইব্রিড গাড়ির পাশাপাশি পুরোনো (পাঁচ বছর পর্যন্ত) হাইব্রিড গাড়িও আমদানির সুযোগ মিলবে।
এ প্রসঙ্গে অটোকন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা একটি বৈশ্বিক প্রয়োজন। যেকোনো দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ও গৃহস্থালি চার খাতে সবচেয়ে বেশি পরিবেশদূষণ হয়। আমরা উন্নয়নশীল দেশ, এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালিতে পরিবেশদূষণ রোধ করা কঠিন। এসব খাতে দ্রুত উন্নয়নের জন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করতে হবে। পরিবহন খাতে আধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে দূষণ রোধ করা যায়।’
সাধারণত এ ধরনের গাড়ির আমদানিকে উৎসাহিত করতে হলে শুল্ক কমিয়ে কাছাকাছি মূল্যে আনার দাবি করে থাকেন আমদানিকারকরা। এ প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, ‘অতিরিক্ত কম দামে গাড়ি দিলে গণপরিবহনের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যেতে পারে। তাছাড়া আমদানিকৃত গাড়ি থেকে সরকারের রাজস্বও যাতে কমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে পরিবেশবান্ধব গাড়িকে উৎসাহিত করার জন্য একে প্রায় সমান মূল্যে আনতে হবে।’ পাশাপাশি কাস্টমস ও এনবিআরের কর্মীদেরও স্বচ্ছতার অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
আমদানিকারকরা জানান, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ গাড়ি আমদানির পর সিএনজিতে রূপান্তর করে চালানো হয়। এটা প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ার কারণে দেশের ক্রেতারা হাইব্রিড বা ইলেকট্রিক প্লাগিং ব্যবস্থার গাড়ি কিনতে আগ্রহী নন। সাধারণত সাধারণ প্রযুক্তির একটি গাড়ির চেয়ে হাইব্রিড গাড়ির মূল্য ৩০-৪০ শতাংশ বেশি হয়।
এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২০ সালের মধ্যে তাদের দেশগুলোতে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়ির ৫০ শতাংশকে হাইব্রিড গাড়িতে রূপান্তর করবে। এজন্য সেসব দেশে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতাদের পক্ষে ভর্তুকিও দিচ্ছে। জাপানও হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছে। দেশটি ২০১৪ সালে জাপানে উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত গাড়ির ১৭ শতাংশ ছিল হাইব্রিড। ২০২০ সালে দেশটি তার গাড়ির ৭০ শতাংশ হাইব্রিডে রূপান্তর করবে বলে পরিকল্পনা নিয়েছে।
উল্লেখ্য, হাইব্রিড গাড়িতে জ্বালানি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এর ব্যাটারি রিচার্জ হয়। ফলে জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি বায়ু ও শব্দদূষণ হয় না। ২০১৪ সালে এর সঙ্গে আরেকটি প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। হাইব্রিড গাড়ির সঙ্গে বাড়তি ফিচার হিসেবে প্লাগ যুক্ত করা হয়েছে, যাতে অবসর সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চার্জ করা যায়।