পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাব

মাছুম বিল্লাহ ভূঞা: মহাবিশ্বে পৃথিবী একটি এবং একমাত্র গ্রহ যা মানুষ বসবাসের জন্য উপযুক্ত। পৃথিবী আগের কালেও ঠিক এমন ছিল না। বর্তমান পৃথিবী অনেক বেশি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যার ফলে ভবিষ্যতেও এভাবে থাকতে পারবে না। বিশুদ্ধ বাতাস, সুপেয় পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও উর্বর মাটি এই কয়েকটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা যা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও মানুষের অতিমাত্রায় চাহিদার চাপে পড়ছে পৃথিবীর মূল্যবান এই সম্পদ। পৃথিবীর সবচেয়ে পরিবর্তনশীল বিষয় হলো জলবায়ু। জলবায়ু বিপর্যয় চরম ঘটনা যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিভিন্ন গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে, চরম আবহাওয়ার কারণে অপমৃত্যু এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির ওপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব রয়েছে।

তামাক একটি স্বাস্থ্যহানিকর পণ্যই শুধু নয়, এটা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও বিরাট হুমকি। তামাক সেবনের কারণে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে লাখ লাখ নিরাপদ মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছে। যেহেতু থার্ড-হ্যান্ড তামাকের ধোঁয়া অনেক সময় ধরে চলতে থাকে। তাই সিগারেট খাওয়ার অনেক পরে থার্ড-হ্যান্ড ধোঁয়া দূষিত বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল রুম এবং গাড়ির মালিক এবং ব্যবহারকারীকে পরিণতি ভোগ করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাক সেবনের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার নিরপরাধ মানুষ অকালে মারা যায়। চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে এক দিকে রাষ্ট্র হিমশিম খাচ্ছে, অপরদিকে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এখানে শেষ নয়, তামাক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকিতে ফেলছে। যেহেতু তামাক জনস্বাস্থ্য ও আমাদের পৃথিবীকে ধ্বংস করে চলেছে। তাই ২০২২ সালের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের Protect the environment. তামাকের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব বোঝা বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তামাক উৎপাদনের ফলে বিস্তৃতভাবে সৃষ্ট বেশ কিছু ঝুঁকির রয়েছে, এর প্রভাব অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের বেশিরভাগই তামাক উৎপাদন পর্যায়ে ঘটে, তারপরে বিতরণ এবং অবশেষে সরবরাহ পর্যায়ে হয়ে থাকে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় দেখায়, জনস্বাস্থ্য এবং জলবায়ুকে অন্যান্য অনেক বিষয় থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনা করা যায় না, যার মধ্যে পরিবেশ একটি। জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও বৈশ্বিক কল্যাণের জন্য পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা জরুরি, কিন্তু এগুলোর ক্ষতির ক্ষেত্রে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব সর্বজন স্বীকৃত। তামাক কেবল জনস্বাস্থ্যের জনই নয়, বরং এটি সামগ্রিকভাবে মানব উন্নয়নের জন্য হুমকি।

তামাক চাষ করতে বনভ‚মি উজাড় করা হচ্ছে, আবার তামাক শুকানোর জন্য গাছপালা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তামাক চাষ এবং শুকানো উভয়ই বনভ‚মি উজাড়ের সরাসরি দায়ী। কারণ তামাক চাষের জন্য বনভ‚মি গাছপালা কেটে পরিষ্কার করা হয় এবং তামাকের পাতা শুকানোর জন্য কাঠ পোড়ানো হয়। তামাক চাষ মাটির ক্ষয়, মাটির উর্বরতা এবং কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং পানি চক্রের ব্যাঘাত ভূমির অবক্ষয় ও মরুকরণের সঙ্গেও জড়িত। এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া বলা যায়। তামাক পৃথিবীর অনেক সম্পদকে ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে। তারপরও এখন পর্যন্ত তামাক নিয়ন্ত্রণ চিত্রের এই দিকগুলো নীতি-নির্ধারকদের কাছ থেকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পেয়েছে। 

১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে তামাক শুকানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে বর্তমানে তামাক শুকাতে জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার হ্রাস পেলেও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নি¤œ এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কাঠের ব্যবহার অনেক বাড়ছে। তামাক শুকানোর জন্য বছরে আনুমানিক ১১.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন কাঠের প্রয়োজন হয় এবং তামাক উৎপাদনের পর তামাকজাত দ্রব্যের জন্য রোলিং পেপার এবং প্যাকেজিং তৈরি করতে আরও কাঠের প্রয়োজন হয়। বনভ‚মি উজাড় এবং ভ‚মি অবক্ষয়ের কারণে ১৯৭০ থেকে আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর (বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন) বন বিশ্বব্যাপী হারিয়ে গেছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে শতকরা ২০ ভাগ বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বনভ‚মি উজাড় অন্যতম প্রধান দায়ী। 

এ ছাড়া বেশিরভাগ সিগারেটের গোড়া বা বাটে থাকে একটি সেলুলোজ এসিসেট ফাইবারের তৈরি ফিল্টার। পৃথিবীতে সর্বাধিক পাওয়া বর্জ্য হচ্ছে সিগারেটের ফিল্টার। বৈশ্বিক পরিবেশের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হওয়া সত্তে¡ও বিশ্বব্যাপী বর্জ্যরে বেশিরভাগ অংশ হচ্ছে এ পরিত্যক্ত ফিল্টার। প্রতি বছর ৬০ মিলিয়নের বেশি ফিল্টার পরিবেশে ফেলা হয়। প্রতি বছর শুধু বাংলাদেশে ৪৯ বিলিয়ন সিগারেট খাওয়া হয়। এ ছাড়া বিড়ি কী পরিমাণ খাওয়া হচ্ছে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। সিগারেটের ফিল্টার যত্রতত্র ফেলা দেয়ার ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে সিগারেটের ফিল্টার ফেলে পরিবেশদূষণ করা হচ্ছে। এই সিগারেটের ফিল্টার ও বাঁট মাটির উর্বরতা নষ্ট করাসহ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর অনেক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সিগারেটের ফিল্টার মাটির উর্বরতা শক্তি ১০ থেকে ২৭ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এটি সারাদেশে পরিবেশের বিপর্যয়ের জন্য অন্যতম দায়ী। পৃথিবীতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করতে তামাক ও সিগারেট কোম্পানিগুলো একক রাজত্ব চালাছে।   

সিগারেটের ফিল্টার ও বাঁট কেবল ভ‚মির ওপরিভাগেই নয়, গিয়ে পড়ছে পানিতে। ফলে জলাভ‚মির জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ছে। সিগারেটের এই উচ্ছিষ্ট প্লাস্টিকগুলো বিষাক্ত এবং এগুলো আমাদের মিঠা পানির উৎস ও সামুদ্রিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ বটে। পানিদূষণের অন্যতম উৎস সিগারেটের ফিল্টার। একটি সিগারেটের ফিল্টার ৮ লিটার পানি দূষিত করে। তামাকের উচ্ছিষ্ট ফিল্টার আমাদের পরিবেশকে দূষিত করছে, বিশেষ করে নদী-নালার, খাল-বিল, জলাধার ও জলজ পরিবেশ। যত্রতত্র ফেলা ফিল্টার দূষণের বড় অংশ পানিতে মিশে ধ্বংস করছে মাছের বংশবিস্তার। ফলে নির্বিচারে মারা যাচ্ছে জলজ ও সামুদ্রিক প্রাণী। জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব থাকায় যারা ধূমপান করেন না, তাদের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থের পরিবেশগত ও মানবিক ক্ষতির বিষয়টি অনেকেরই ভালোভাবে জানা আছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের প্যাকেজিংয়ের জন্য প্লাস্টিকের উপকরণ ব্যবহার করার সমস্যা প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু গত এক দশকে এটি একটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

তাছাড়াও তামাক পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয় যান্ত্রিক যানবাহন, বিমান, কারগো, জাহাজ ইত্যাদি। এসব যন্ত্র-দানব চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয় জীবাশ্ম জ্বালানি। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে, বাড়ছে ভূ‚-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা। কিছু তামাক কোম্পানি তাদের তামাক উৎপাদন-সম্পর্কিত কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানি তা করেনি। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (BATÕs) নিজস্ব প্রতিবেদনে প্রকাশ করছে, ২০১৫ সালে ৮ লাখ ৭৬ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করেছে। যা প্রায় ৩ মিলিয়ন ট্রান্সআটলান্টিক ফ্লাইটের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ। অন্যান্য ধরনের নির্গমনও আমাদের অজানা রয়েছে, যেমনÑপ্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্টে পাতা পরিবহন থেকে কার্বন নির্গমন এবং প্রস্তুতকারকদের থেকে প্রক্রিয়াজাত পাতা পরিবহন, সরবরাহ বিপণন পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ। তবে JTI তামাক পণ্য পরিবহনের জন্য তার কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ তথ্য আলাদা, যার পরিমাণ ৮ লাখ হাজার  মেট্রিক টন। ফিলিপ মরিস ইন্টারন্যাশনাল (PMI)–এর গাড়ির ফ্লিট নির্গমনের পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার  মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য। এতে বিমান ব্যবহারের ফলে ৪ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন নির্গমন অন্তর্ভুক্ত নয়। উভয় পদক্ষেপ পরিবেশের ওপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক রয়েছে। ফলে ওজোন স্তরের ক্ষতির কারণে প্রাণ-প্রকৃতি ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ছে।

সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে অনুচ্ছেদ-১৮(ক) বর্ণিত আছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা-২৬৯ এবং ধারা-২৭৮ সুস্পষ্টভাবে বলা আছে,  অবহেলা করে এমন কোনো কাজ করে এবং যা সে জানে বা বিশ্বাস করার কারণ আছে, ওই কাজ যা  জীবনের জন্য বিপজ্জনক রোগের সংক্রমণ ছড়ায়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে; এবং বায়ু মণ্ডল ও পরিবেশকে দূষিত করে জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ড. মোহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ এবং অন্যান্য মামলায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, জীবনের অধিকার বলতে- পরিবেশ সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ, নির্মল বাতাস এবং সুপেয় পানি প্রাপ্তির অধিকারকে যুক্ত করেন। যা ছাড়া জীবনের অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে।

 ২০০৩ সালে সর্বসম্মতিক্রমে তামাক নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়েছিলÑযা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি। আলোচনায় এটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো বৃহত্তর পরিসরে পরিবেশের ওপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর ১৮-অনুচ্ছেদ স্পষ্টভাবে বলে যে: এ কনভেনশনের অধীনে সদস্যগুলো সর্বসম্মত্ব সিদ্ধান্তে দায়িত্ব পালনে একমত হয়েছে, নিজ নিজ ভ‚-খণ্ডের মধ্যে তামাক চাষ এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশের সুরক্ষা এবং পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত জনস্বাস্থ্যের প্রতি যথাযথ গুরুত দেবেন ও বিবেচনা করবেন। এটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সদস্যরাষ্ট্রগুলো জনস্বাস্থ্যের ওপর তামাকের উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব কমাতে কাজ করেছে।

পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের অনুচ্ছেদ ১৮ বর্ণিত আছে। ২০১৬ সালের আগে এই ধারাটির প্রতি খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যাই হোক, ২০১৬  সালের নভেম্বর মাসে তার সপ্তম অধিবেশন চলাকালীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO)  সেই সঙ্গে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP)  সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার জীবনচক্রে তামাকের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করতে সহায়তা করার জন্য বিকল্পনীতি এবং ব্যবহারিক অভিযোজন রূপরেখার জন্য এবং একই সময়ে (কপ-৭) এ তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাগত এবং পরিবেশগত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নিতে ও বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস কনভেনশন সচিবালয়কে অনুরোধ করেছিল। 

 যা সম্মেলনের অষ্টম অধিবেশন তামাক উৎপাদন, প্যাকেজিং, বিপণন, পরিবহন ইত্যাদি জীবনচক্রের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব প্রকাশ করে এবং এই প্রভাব এড়াতে এবং প্রশমিত করার কৌশলগুলোর ওপর প্রযুক্তিগত জ্ঞান সংগ্রহ করে। সেই সঙ্গে এটি মোকাবিলার জন্য নীতির প্রণয়ন এবং ব্যবহারিক অভিযোজনের সুপারিশ করে। নীতিনির্ধারক, সরকার এবং জনসাধারণের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তামাকের বিভিন্ন পরিবেশগত ক্ষতির দিকগুলোর ওপর তথ্য সংকলন করে এবং এমন এমটি সুপারিশমালা তৈরি করে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সরবরাহ করে। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে মানব কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। 

নিন্মœ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে তামাকের ব্যবহার বেশি হয়। ফসলের স্বল্প-মেয়াদি নগদ সুবিধা লাভ, খাদ্য উৎপাদনে নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকি, তামাক কোম্পানি কর্তৃক ঘন ঘন কৃষকের ঋণ সুবিধা প্রদান এবং কৃষকের দরিদ্রতা তামাক উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য দায়ী। যা জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ অর্থনীতির ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ বটে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়নে তামাকের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব ও ক্ষতিগুলো মোকাবিলা করার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে এখনই।

 আইনজীবী 

masumbillahlaw06@gmail.com