পরিবেশ সুরক্ষা আইনের যথাযথ প্রয়োগ হোক

শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল নেটওয়ার্কের (বেন) জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবানরাই পরিবেশ ধ্বংস করছে। তারা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নদী দখল, বন ধ্বংস ও পরিবেশ বিপন্ন করছে। তার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন অন্য বক্তারা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘প্রায়ই শুনি আগে উন্নয়ন, তারপর পরিবেশ। কিন্তু যে উন্নয়ন পরিবেশ রক্ষা করে হবে না, তা টেকসই হবে না।’

অর্থ, রাজনীতি ও ক্ষমতার জোরে একশ্রেণির মানুষ সড়ক, বনভূমি, খাল ও নদী দখল করে পরিবেশ দূষণ করছেন। এটি সাধারণ মানুষও জানেন। বিশিষ্ট নাগরিকদের বক্তব্যে সাধারণ মানুষের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি হয়েছে মাত্র। একটি শ্রোতাপ্রিয় গানের কলি‘আমার একটি নদী ছিল জানল না তো কেউ…।’ আর আমাদের দেশে নদী নিয়ে কী হচ্ছে, তা সবাই জানে।  বাস্তবতা হলো রাষ্ট্র নদী রক্ষায় কঠোর হচ্ছে না। একই অবস্থা বনভূমি ও পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও। আমরা জানি, দূষণ-দখলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ইউরোপের অনেক নদী, বিশেষ করে শিল্পবিপ্লবের পর। কিন্তু সময়োচিত উপলব্ধির কারণে নদী আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়, স্বরূপে। উদাহরণ হিসেবে অন্তত দুটি নদীর নাম উল্লেখ করা যায়Ñরাইন ও টেমস। রাইন নদী সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত হওয়ার পর জার্মানিতে সেদিন স্মরণযোগ্য উৎসব হয়েছিল। টেমস নিয়ে ব্রিটিশরা এখন গর্ব করে, অথচ একদিন স্যামুয়েল কোলরিজ থেকে শুরু করে বহু কবির কণ্ঠে আক্ষেপ উচ্চারিত হয়েছে টেমসের শীর্ণ দশায়। অথচ আমরা পরিবেশকে উপেক্ষা করে উন্নয়ন করতে চাই। তিন দশক আগে ব্রিটিশ গবেষক জন হামফ্রে বলেছিলেন, ‘যে দেশের শত শত নদী আছে, সে দেশে অভাব থাকার কথা নয়।’ শুধু মৎস্যাধার তৈরি করেই আমরা হতে পারতাম বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান ধনী রাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবতা এই, এখন অনেক নদীর মাছই পাতে তোলা যায় না, পানি ছোঁয়া যায় না। দূষণ-দখলে মরতে বসেছে বহু নদী। শুধু কি তা-ই, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই হাওর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উড়ালসড়ক নির্মাণে প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা থেকে শুরু হয়ে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালীতে গিয়ে উড়ালসড়কটি শেষ হবে। এ-সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদনে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উত্থাপন করা হচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হলে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এমনকি হাওরের শ্রেণিও পরিবর্তন হয়ে যাবে।

সরকারের এমন ভূমিকায় পরিবেশ দূষণ-দখলকারী ক্ষমতাবানরাও প্রশ্রয় পাবে। এ অবস্থা আমরা কী করে বলি, ‘পরিবেশ সুরক্ষা আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করুন,’ যেখানে সরকারই দ্রুত পরিবেশবিনাশী প্রকল্প পাস করতে চাচ্ছে। নতুন শিল্পবিপ্লবে আমাদের পরিবেশ আরও বিপন্ন হতে পারে। সব অভিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশদূষণকারী প্রকল্প গ্রহণের আগে নিবিড় যাচাই-বাছাই প্রয়োজন।