পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়াই সবকিছু নয়

ইয়াছিন আরাফাত:জিপিএ-৫ একজন শিক্ষার্থীর ক্ষমতা বা সম্ভাবনার একমাত্র সূচক নয়। তাই বলে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে, তাদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখছি না। জিপিএ-৫ পেলে তা জীবনে ভালো কিছু করতে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে, কিংবা জীবনে সফল হতে অনেকটা সাহস জোগায়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ যদি জিপিএ-৫-কেই সবকিছু মনে করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, তিনি অন্য কিছু করতে পারেন কিংবা না পারেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না।

একজন মানুষ একটু একটু হেঁটেই নিজেকে পৃথিবীর দ্রুততম মানব মনে করলে তিনি দৌড়াবেন কেমন করে? নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন মনে করে হাল ছেড়ে দিলে কেউ কি জীবনে এগোতে পারবেন! জিপিএ কখনও কারও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।

একজন শিক্ষার্থী জিপিএর ক্ষেত্রে কী পেয়েছেন, সেটির মূল্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত থাকলেও তিনি যদি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সুযোগ না পান, তাহলে জিপিএর কী মূল?্য আছে? তখন কেউ জিজ্ঞেস করবে না যে, আপনি কোন পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এরপর শিক্ষাজীবন শেষ হলে কেউ জিজ্ঞেস করবে না, কোথা থেকে পাস করেছেন। পরিচয় কাজে ও কাজের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে যে, একজন মানুষ কতটা নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারেন।

আর যাদের জিপিএ ভালো নয়, নানা প্রতিবন্ধকতা, সীমাবদ্ধতার কারণে জিপিএ-৫ পেতে ব?্যর্থ হয়েছেন, তাদের হতাশ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঘুরে দাঁড়াতে হবে, কোথায় ঘাটতি আছে খুঁজতে হবে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। আল্লাহ্ নিজেই আল কোরআনে বলেছেন, আমি কারও ওপর সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দিই না।’ যে যেমন পরিশ্রম করবে, তিনি তেমন ফল পাবেন। যেমনÑতাইমুর পরপর দুবার এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। অথচ অধ্যবসায়ের ফলে ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন। অন্যরাও তাইমুরের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সফল হতে পারেন।

নানা কারণে একজন শিক্ষার্থী আশানুরূপ ফল করতে পারেন না। ভালো জিপিএ না পাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমনÑএক. যে কোনো পরীক্ষায় সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। অনেক সময় সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে জানা সত্ত্বেও সব প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় পাইনি বলে এই নয় যে আমি এই প্রশ্নের উত্তর পারি না। এতে করে এখানে একটা শিক্ষার্থীর প্রকৃত মূল?্যায়ন হয় না। দুই. ব্যক্তিগত পরিস্থিতির কারণেও একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, যা আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা বা মানসিক সীমাবদ্ধতা অন্তর্ভুক্ত থাকে, যার কারণে আমাদের জিপিএ খারাপ হতে পারে। তাই বলে এই নয় যে, সেই শিক্ষার্থী ব?্যর্থ কিংবা অযোগ্য। তিন. পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত কার্যকলাপে বেশি সময় দেয়ার কারণেও জিপিএ কম আসতে পারে। যেমনÑ খেলাধুলা, শিল্পকলা প্রভৃতি। পাঠ?্যবইয়ের ওপর মনোযোগ কম দেয়ায় জিপিএ খারাপ হতে পারে। চার. সব বিষয়ে সমান আগ্রহ না থাকার কারণেও জিপিএ খারাপ হতে পারে। পাঁচ. মানসম্মত পরীক্ষার সীমাবদ্ধতার কারণেও জিপিএ খারাপ হতে পারে।

জীবন ও কর্মজীবনে সাফল্য শুধু জিপিএ দ্বারা নির্ধারিত হয় না। নেটওয়ার্কিং, কাজের নীতি, স্থিতিস্থাপকতা এবং ব্যর্থতা থেকে শেখার ক্ষমতার মতো অন্য কারণগুলোও একজন ব্যক্তির অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যদিও জিপিএ একজন শিক্ষার্থীকে মূল্যায়নের জন্য একটি প্রয়োজনীয় মানদণ্ড, তবুও এটিকে শিক্ষার্থীর সক্ষমতার ও দক্ষতার একমাত্র পরিমাপক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তির সামগ্রিক সম্ভাবনা ও প্রতিভা মূল্যায়ন করার সময় অন্যান্য কারণগুলো, যেমন ব্যক্তিগত শক্তি, আগ্রহ, পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত কার্যকলাপ, ব্যক্তিগত পরিস্থিতি এবং বাস্তব বিশ্বের দক্ষতাগুলোকে স্বীকার করা এবং প্রশংসা করা উচিত।

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়