শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশের পর্যটন এলাকাগুলোয় পর্যটকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত বহুতল ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ভূখণ্ড রক্ষায় সবার দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সূত্র: বিডি নিউজ।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তাহলে এই সমুদ্রসীমা, পাহাড় সবকিছু মিলিয়ে অত্যন্ত চমৎকার একটি ভ‚খণ্ড আমরা পেয়েছি, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই ভ‚খণ্ডকে আকর্ষণীয় করা, উন্নত করা এবং এর প্রাকৃতিক পরিবেশটা রক্ষা করাÑএটা আমাদের সবার একান্তভাবে প্রয়োজন।’
কভিড মহামারিতে পর্যটনের ক্ষতি হলেও ওই সময় কক্সবাজারে ভিড় কমায় প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ভালো কিছ্ওু যে হয়েছে, সে কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘একটা উপকার আমরা পেয়েছি। যেহেতু কোনো পর্যটক সেখানে যেতে পারেনি, কক্সবাজারে হারিয়ে যাওয়া লাল কাঁকড়া, সেগুলো যেমন ফিরে এসেছে, কিছুদিন ডলফিনও দেখা গেছে, আমাদের কাছিমগুলো, তাদের প্রজনন ক্ষেত্র ছিল সেগুলোও কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছিল।’
সৈকতে লাল কাঁকড়ার বসবাসের জায়গা ও কাছিমের প্রজননক্ষেত্রগুলো বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে, সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো যেন নষ্ট না হয়।’
ছোটবেলায় সৈকতে লাল কাঁকড়ার পেছনে ছোটার গল্প অনুষ্ঠানে শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দিন ধরতে পারিনি। এরা এত চালাক থাকত, দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে গর্তে ঢুকে যেত। চেষ্টা করেছি বের করতে, কিন্তু কখনও পারিনি। এই স্মৃতিগুলো ভুলব কী করে!’
কক্সবাজারকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘যেখানে সেখানে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে কোনো স্থাপনা আপনারা করবেন না।’
কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পুরো কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর উন্নয়নটা অপরিকল্পিতভাবে না হয়ে যেন মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী হয়, আর আমাদের এই যে বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে, এটাতে পর্যটনের ক্ষেত্রটা আরও প্রসারিত করা, আমার দেশি পর্যটকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকের জন্যও আকর্ষণীয় করা। এই উদ্যোগটাই আমরা নিতে চাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ঘরহারা বহু মানুষ কক্সবাজারের একটা বস্তিতে বসবাস করা শুরু করেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষগুলোর পুনর্বাসনের জন্য সরকার তাদের খুরুশকুলে বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেয়।
কক্সবাজারের মৎস্যজীবীদের জন্য আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও উন্নতমানের শুঁটকির হাট করার পরিকল্পনার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
কক্সবাজারে লবণ চাষ ও চাষিদের জন্য সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারই ক্ষমতায় এসে প্রথমবারের মতো লবণচাষিদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করেছে, তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। লবণের চাহিদা কোনো দিন ফুরাবে না। বিদেশে বরফ গলানোর জন্য অপরিশোধিত লবণ ব্যবহার করা হয়। আমরা যদি সেভাবে লবণ উৎপাদন বাড়াতে পারি, রপ্তানিও করতে পারব। দেশের চাহিদাও মেটাতে পারব, যেটা পরিশোধিত লবণ।’
তাই লবণ উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষকদের উন্নয়নে ‘বিশেষ দৃষ্টি রাখার’ জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
ঝড়, জলোচ্ছ¡াস থেকে রক্ষা পেতে কক্সবাজারের পুরো সমুদ্রসৈকত ঘন ঝাউবন দিয়ে ঘিরে দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করে দিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা একের পর এক ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা বাংলাদেশের যে সমুদ্রসীমায় অধিকার রয়েছে, এই বিষয়টা নিয়ে কখনোই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’
আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরার পর সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন এই সমুদ্র সম্পদ আমাদের ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিতে যাতে অবদান রাখতে পারি, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই। তাই আমরা বøæ ইকোনমি অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতি আমরা গ্রহণ করেছি এবং এরই ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে চাই।’
কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠে এ অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।