নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই পর্যটনশিল্পের বাজার ধরতে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।
গতকাল বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে ঢাকায় ‘বিশ্ব পর্যটনে সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, দেশে পর্যটনের প্রসারে ট্যুরিজম বোর্ডে আরও ‘দক্ষ লোক’ নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ট্যুরিস্ট হ্যাভেন বাংলাদেশের আয়োজনে এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান বাবু। সেমিনার শুরুর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বিশ্ব পর্যটন দিবসের শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) প্রতিবেদন তুলে ধরে বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে এ শিল্পে বার্ষিক কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ২.৯ শতাংশ। জিডিপিতে পর্যটনশিল্পের প্রত্যক্ষ অবদানের ভিত্তিতে ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের অবস্থান ১৪২তম।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি। ধরা হচ্ছে ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোতে। এছাড়া বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মতে, ২০১৮ সালের মধ্যে এ শিল্প থেকে ২৯ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বাংলাদেশ যদি এ বাজার ধরতে পারে, তবে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আর সেজন্য ট্যুরিজম বোর্ডে ‘দক্ষ লোক’ নিয়োগ দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যারা আছেন, তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। এখানে আরও দক্ষ লোকের প্রয়োজন।’
সেমিনারের প্রধান আলোচক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো এখন যে সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই সুযোগের সদ্ব্যহার করা। পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রকৃতির যে অপার সম্পদ আছে, তা তুলে ধরতে পারলেই আমরা পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটনশিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান সম্ভব। সেজন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় নীতির প্রয়োজন। আর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রাখতে হবে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।’
পর্যটন বোর্ডে একজন কর্মকর্তা আসেন, তিনি আবার চলে যান। তিনি পর্যটনশিল্পে আকৃষ্ট কি না তাও জানি না। তবে নীতি করতে গেলে সেখানে পর্যটনসংশ্লিষ্ট কাউকে আনতে হবে। পাশাপাশি পর্যটনশিল্পকে দেশের বাইরে জনপ্রিয় করতে দেশের মানুষকেও উৎসাহ জোগাতে হবে বলে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে দেশের পর্যটন খাতকে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত না রেখে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনার সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পর্যটন খাত যে মন্ত্রণালয়ের আওতায় আছে, তারা খারাপ করছে এটা বলব না। তবে এটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকলে সব ধরনের কাজে সমন্বয়টা আরও ভালো হতো, কাজে আরও গতিশীলতা আসত। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ বৈঠকেও যে একই সুপারিশ করা হয়েছে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন প্রতিমন্ত্রী।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে দেশের ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ ও পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে’ দুইয়ে মিলে ‘একক’ মন্ত্রণালয় গঠনের সুপারিশ করা হয়।
এর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে শুক্রবারের অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূতাত্ত্বিক নিদর্শন যে কোনো দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন পর্যটকরা বেড়াতে যান, তখন সেদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো তারা দেখতে যান। আমাদের এখান থেকে কেউ ভারতে গেলে তাজমহল ও ভিক্টোরিয়া পার্ক দেখে। বাংলাদেশে বেড়াতে এলে পর্যটকরা লালবাগ কেল্লা, মহাস্থানগড়, ষাটগম্বুজ মসজিদ এসব নিদর্শন দেখতে যান।”