আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছরে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এরপর ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সব ব্রোকারেজ হাউস পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারবাহিকতায় প্রতি প্রান্তিকে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের (সিসিএ) তথ্য সব ব্রোকারেজ হাউসের কাছ থেকে নেয় স্টক এক্সচেঞ্জ। সম্প্রতি গ্রাহক হিসাবের ৩০ জুন সমাপ্ত সর্বশেষ প্রান্তিকের হিসাব চেয়ে সব ট্রেকহোল্ডারের কাছে চিঠি পেয়েছে ডিএসই। আজ সোমবারের মধ্যে যা জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত ২ অক্টোবর ২০২২ জারি করা চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করে সব ব্রোকারেজকে পাঠানো ডিএসই-এর চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রেকহোল্ডরকে ১০ জুলাই ২০২৩-এর মধ্যে তথ্য সংযুক্ত করে নির্দিষ্ট নিয়মে বা ফরম্যাটে ৩০ জুন শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে এমএস এক্সেল এবং পিডিএফ উভয় ফরম্যাটে ই-মেইলের মাধ্যমে উল্লেখিত তথ্যের সফট কপি পাঠানোর জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হাউসকে পরবর্তী প্রতি ত্রৈমাসিক শেষেও উপরোক্ত তথ্য পাঠানোর বিষয়ে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত কয়েক বছরে তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ এবং বানকো সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে। এসব ঘটনার পর বিএসইসি দুই পুঁজিবাজারের সব ট্রেকহোল্ডার পরিদর্শন ও তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এ তদন্তের ফলে পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ১০৮টি ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউসের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) ৫৮৫ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০৩টি কোম্পানি তাদের ঘাটতি সমন্বয় করলেও এখনও ৫টি কোম্পানি ঘাটতি সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের ঘাটতি রয়েছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘাটতি পিএফআই সিকিউরিটিজের। এছাড়া এশিয়া সিকিউরিটিজের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং মর্ডান সিকিউরিটিজের ৫ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বিএসইসি গত বছরের ২২ মার্চ গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের লিমিট সুবিধা স্থগিত করা, যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসেবে আইপিও কোটা সুবিধা বাতিল করা, স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ স্থগিত রাখা এবং ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন এবং নতুন শাখা ও বুথ খোলা বন্ধ রাখা।
এর আগে গত বছরের ২১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের আমানত অর্থাৎ শেয়ার ও অর্থ সরিয়ে নেয়া তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ এবং বানকো সিকিউরিটিজসহ ২৫টি ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন সনদ নবায়ন বন্ধসহ নানা সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন কিছু ট্রেক হোল্ডার কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসেবে গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ এবং সংশ্লিষ্ট ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী গ্রাহকদের সিকিউরিটিজের ঘাটতি উদঘাটিত হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি এবং শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে।