Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 1:08 pm

পর্যাপ্ত ভুট্টা ক্রয়কেন্দ্রের অভাবে তামাক চাষে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: ধান কাটা শেষ। এখন জোর প্রস্তুতি চলছে অন্য ফসল চাষের। ভুট্টা, তামাক, আলুসহ অন্যান্য ফসল চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন লালমনিরহাটের কৃষক। এ ধরনের চাষাবাদেই অভ্যস্ত উত্তর জনপদের কৃষকরা। তবে কিছুদিনের মধ্যে তামাক পাতার বিষাক্ত ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে অঞ্চলে। এই তৃণগাছ দখল করবে লালমনিরহাটের কৃষিজমির সিংহভাগ। এ জেলায় সম্ভাবনাময় ফসল হলেও ভুট্টার পর্যাপ্ত বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় কৃষকরা তামাক চাষে বাধ্য হচ্ছে।

জানা গেছে, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে লালমনিরহাটে সব থেকে বেশি তামাক চাষ করা হয়। এ মৌসুমে বিকল্প অনেক ফসল চাষে ভালো সম্ভাবনা থাকলেও তামাককেই বেছে নিচ্ছেন জেলার কৃষকরা। অথচ তামাক চাষে যে শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য ব্যয় অনেক। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে তামাক পাতার বাজারজাত করা পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে পুরো পরিবারকেই অনেক কষ্ট-ভোগান্তি পোহাতে হয়।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বীজতলা তৈরির পর তামাকের চারা তুলে জমিতে রোপণ করতে হয়। আগাছা, পাতাপচা রোগসহ বেশকিছু রোগবালাই দমন করতে সকাল-সন্ধ্যা ক্ষেতে শ্রম দিতে হয়। তামাক চারা বড় হওয়ার পরে তামাকে ডেমু (ছোট পাতা), বিষপাতা (ছোট পাতা) ভাঙাসহ অনেক রকম পরিচর্যা করতে হয় কৃষকের গোটা পরিবারকেই। এই শ্রম ব্যয়ের তুলনায় তামাক চাষে প্রকৃত লাভ অনেক কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরপরও তামাক চাষ বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, তামাক কোম্পানিগুলো ফ্রিতে বীজ, ধারে সার, টাকা দেয়াসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এজন্য তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েন কৃষক। তবে এ নিয়মের মধ্যেই কোম্পানিগুলোর ‘নব্য নীলকর প্রথা’র মতো চক্রে কৃষকদের আটকে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তাপমাত্রার কমবেশিতে পাতা নষ্ট বা রংও পরিবর্তন হতে পারে। এ ধরনের নানা কারণে তামাকের টাকা হাতে পেতেও বেগ পেতে হয় কৃষকের।

রায়হান শরীফ নামের একজন ভূমি মালিক জানান, তিনি তার বর্গা চাষিকে তামাক চাষ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তামাক চাষে জমির অনেক ক্ষতি হয়। ক্ষেতে পরিবার-বাচ্চা নিয়ে কাজ করতে হয়। এতে অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। তামাকের পাতা গরু-ছাগলও খায় না। তাতেই বোঝা যায় কতটা বিষাক্ত এ পাতা।

আরেকজন কৃষক বলেন, ‘লালমনিরহাট অঞ্চলে ভুট্টার অনেক সম্ভাবনা। কম শ্রমে লাভও বেশি। কিন্তু ভুট্টার নির্দিষ্ট এবং তামাক কোম্পানির মতো ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় কৃষকদের অনেকটা বাধ্য হয়েই তামাক চাষ করতে হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলোর মতো যদি সরকার ক্রয় কেন্দ্র করে, তাহলে ভুট্টার চাষ আরও বাড়বে। তামাক চাষ তখন সবাই ছেড়ে দেবে।’

জেলা কৃষি দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ‘তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা কৃষকদের অন্যান্য সব বিকল্প ফসল চাষ করতে বলছি। বিশেষ করে ভুট্টা। এ ফসলে তারা লাভবান হতে পারবেন। তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কাজ করলেও, এ মুহূর্তে কতটা চাষ কমেছে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। চাষ শুরুর পর হয়তো বলা যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তামাক চাষ চলতি মৌসুমে আগের তুলনায় কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় আফাজ উদ্দিন, কুদ্দুস মিয়া, মজিবরসহ কয়েকজন কৃষক এ তথ্য জানান। আফাজ উদ্দিন বলেন, গত বছর ৯০ শতাংশ জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন তিনি। এবার মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে তামাক চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বেশ কিছু তামাক ক্রয় কেন্দ্র এবং ধারে সার, টাকা দেয়ার কার্ড কমিয়ে দিয়েছে। ফলে এবার অনেক চাষিই তামাক চাষ করছেন না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাটে জমি উর্বরতা কমে যাওয়ায় তামাক কোম্পানিগুলো পাশের জেলায় নজর দিচ্ছে। লালমনিরহাট জেলা লাগোয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা এবং রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলা নতুন করে তামাক চাষের বেছে নিয়েছে কোম্পানিগুলো।