নিজস্ব প্রতিবেদক: বিতরণ চার্জ বাড়ানোর জন্য পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবের বিপরীতে উল্টো তা কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির বিতরণ চার্জ বর্তমান ঘনমিটারপ্রতি ২৬ দশমিক ৫৪ পয়সা থেকে ২৬ দশমিক ৫১ পয়সা ও বাখরাবাদের বিতরণ চার্জ ২৫ দশমিক ৮১ পয়সা থেকে ১৮ দশমিক ৫৬ পয়সা করার সুপারিশ করে কারিগরি কমিটি।
রাজধানীর টিসিবি ভবনে গতকাল গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ে চলমান গণশুনানির চতুর্থ দিনে প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষে গ্যাসের মূল্য ও বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির আবেদনের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হলে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এসব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে বিতরণ চার্জ কমানোর সুপারিশ করে।
গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আবদুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান, রহমান মুর্শেদ ও মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া। এছাড়া কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম, বাখরাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পেট্রোবাংলা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তা পর্যায়ে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক শ্রেণি ছাড়া বাকিগুলোতে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। সে সঙ্গে বর্তমান বিতরণ চার্জ ৪০ দশমিক শূন্য চার পয়সা বাড়িয়ে ২৬ দশমিক ৫৪ পয়সা থেকে ৬৬ দশমিক ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়। তবে কমিশনের কারিগরি কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, গ্যাস বিতরণ ট্যারিফ নির্ধারণ পদ্ধতি মোতাবেক পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের রেট বেজের ওপর রিটার্ন বিবেচনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাক্কলিত পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের নিট রাজস্ব চাহিদা ঘনমিটার প্রতি ২৬ দশমিক ৫১ পয়সা। আর বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৬ দশমিক ৫৪ পয়সা।
সুপারিশে আরও বলা হয়, গ্রাহকের প্রকৃত গ্যাস ব্যবহার মোতাবেক বিল প্রণয়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে সব গ্রাহক শ্রেণির সর্বনি¤œ চার্জ প্রত্যাহার করে স্থায়ী ব্যয়ের একটি অংশ গ্রাহকের অনুমোদিত লোডের ভিত্তিতে ডিমান্ড বা ফিক্সড চার্জ হিসেবে রিকোভার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যমান বিতরণ চার্জ সমপরিমাণ হারে হ্রাস করা যেতে পারে।
অন্যদিকে বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানির প্রস্তাবে দেখা যায়, এ প্রতিষ্ঠানটিও ভোক্তা পর্যায়ে গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক শ্রেণি ছাড়া বাকিগুলোতে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। সে সঙ্গে বর্তমান বিতরণ চার্জ ২৫ দশমিক ৩০ পয়সা বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৮১ পয়সা থেকে ৫১ দশমিক ১১ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়। তবে কমিশনের কারিগরি কমিটি তাদের সুপারিশে বলেছে, রেট বেজের ওপর রিটার্ন বিবেচনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাক্কলিত বাখরাবাদ গ্যাসের নিট রাজস্ব চাহিদা ঘনমিটার প্রতি ১৮ দশমিক ৫৬ পয়সা। আর বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৫ দশমিক ৮১ পয়সা।
কারিগরি কমিটির সুপারিশে আরও বলা হয়, ইবিসি মিটার স্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃত গ্যাস সরবরাহ চাপ অনুযায়ী গ্রাহকের প্রকৃত ব্যবহারভিত্তিক বিল প্রণয়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক। মিটারবিহীন গৃহস্থালি গ্রাহকের প্রকৃত গ্যাস ব্যবহার নিরূপণের লক্ষ্যে কমিশন কর্তৃক একটি জরিপ আবশ্যক। আরও বলা হয়, গ্যাস বিক্রয়ের পরিমাণে কোনো ধরনের সমন্বয় করা যাবে না। প্রকৃত মিটার রিডিং বা গ্যাস মোতাবেক গ্যাস বিক্রয়ের পরিমাণ নিরূপণ করতে হবে এবং সিস্টেম লস হিসাব করতে হবে।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এইসব প্রস্তাব যুক্তিহীন। তিনি বলেন, জনগণ ঠিকমতো গ্যাস পায় না কিন্তু গ্যাসের বিল পুরোটা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, এভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা কর হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধান না করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতেও কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক শামসুল আলম।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গ্যাসের সিস্টেম লস ও চুরি বন্ধ না করা গেলে গ্যাস খাতে শৃঙ্খলা আসবে না। এলএনজি আসলেও চুরি থামবে না। তাই আগে চুরি ঠেকাতে হবে। এ বিষয়ে কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে।
