Print Date & Time : 25 July 2025 Friday 7:19 pm

পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : প্রকল্প উদ্বোধনের পাঁচ বছর হলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের। ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি সইয়ের সময় আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। টানেল বাস্তবায়ন হওয়ার পর আনোয়ারা প্রান্তে টানেল সড়কও এখন দৃশ্যমান। তবে একই সঙ্গে চায়না হারবার ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) সঙ্গে যৌথ প্রকল্পটির কাজ থমকে আছে পাঁচ বছর ধরে। ফলে এ অঞ্চলের

কোরিয়ান এক্সফোর্ট জোনের (কেইপিজেড) পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আনোয়ারায় শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উম্মোচন হয়। মনে করা হয়েছিল আনোয়ারায় সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হবে চায়না জোন। 

সূত্র বলছে, আনোয়ারাকে বিশেষ একটি অর্থনৈতিক জোন হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে চায়না ইকোনমিক জোন। অর্থনৈতিক জোনের চীনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে আনোয়ারা অর্থনৈতিক জোনের অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে এ অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২৯১ একর খাসজমির লিজ সম্পাদন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেখানে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হবে। তবে করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া চীনের এ প্রকল্পটি এখনও পর্যন্ত স্তবির হয়ে আছে।

প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে চায়না ইকোনমিক জোনের অবকাঠামো উন্নয়নে এখনও সীমানা প্রাচীরও পূর্ণাঙ্গ দেয়া হয়নি। নির্মাণকাজ বন্ধ গত পাঁচ বছর ধরে। কয়েকজন প্রহরী আর চায়না নিযুক্ত কর্মকর্তা ও বেজার কর্মকর্তারা হাজিরা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

বেজার একটি সূত্র বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে বেজার জটিলতার কারণে সরকার চ‚ড়ান্ত চুক্তি সই না করায় নির্মাণকাজের বন্ধ রয়েছে। নানা কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের বনিবনা না হওয়ায় নতুন করে ঠিকাদার খুঁজছে সরকার। আর শিগগিরই নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে চায়না ইকোনমিক জোনের নির্মাণকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)।

তবে স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ প্রকল্পটি নিয়ে চায়নার ক‚টনৈতিক সম্পর্ক তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। ফলে স্থবির হয়ে আছে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হতে যাওয়া এ প্রকল্পটি।

প্রকল্পটি নিয়ে চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল ইকোনমিক জোনের চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিনয় বাড়ৈ বলেন, কিছু কিছু জটিলতা রয়েছে। যার কারণে ২০১৯ সালের পর থেকে কাজ মোটামুটি বন্ধ। এখন শুনছি আবার কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে আমরা প্রায় ২০০ একর ভ‚মি উন্নয়ন করেছি। রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর দিয়েছি।

তিনি বলেন, আনোয়ারার পিএবি প্রধান সড়ক কালাবিবি দীঘি থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের এবং অন্যটি বৈরাগ থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত চারলেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর। সমান করা হয়েছে প্রকল্প এলাকার ২০০ একর পাহাড়িটিলা। তাছাড়া প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা ভ‚মিও চিহ্নিত করা আছে। জটিলতাগুলোর সমাধান হলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

সরকার কবে নাগাদ কাজের অনুমতি দেবেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, বেজার একটি টিম কিছুদিন আগেও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসেছিল, তারা একটা প্রতিবেদন জমা দেবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে। আশা করছি, খুব দ্রæত সময়ে প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আনোয়ারায় এটি হবে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।