বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা চাঁদপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এক হাজার ৫৬৭ কোটি ৪ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করেছে। এ সময়ের মধ্যে প্রবাসীদের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংকের ২০টি শাখায় ৩৫৭ কোটি, জনতা ব্যাংকের ১৫টি শাখায় ২৫৮ কোটি ৬২ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকের ২১টি শাখায় ৬৬৩ কোটি, কৃষি ব্যাংকের ২৮টি শাখায় ৬১ কোটি ৩১ লাখ এবং রূপালী ব্যাংকের ১৩টি শাখায় ২২৭ কোটি ১১ লাখ টাকার রেমিট্যান্স অর্জন করে। সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জেলার দুই শতাধিক ব্যাংক শাখা ও শপিংমলে অর্থের তারল্য সৃষ্টি করছে। জেলায় প্রবাসীদের নিজ নিজ বাড়ি, ভবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ নিজ নিজ এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দিতে ভূমিকা রাখছে বৈদেশিক রেমিট্যান্স।
সরকার প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রণোদনা দেয়ায় বৈধ পথে বৈদেশক মুদ্রা আসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি রেমিট্যান্স প্রণোদনা দুই শতাংশ বাড়িয়ে সরকার আড়াই শতাংশ করেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা যায়, মধ্য প্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের বৈধ প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রবাসী শ্রমজীবী অবস্থানরত করছেন। এসব প্রবাসী নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে তাদের স্বজনদের কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে বিপুল এ অর্থ পাঠান। এছাড়া চাঁদপুরের উত্তরা, রূপালী, ফারমার্স, মার্কেন্টাইল, প্রাইম, ডাচ্-বাংলা, সিটি, ন্যাশনাল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ট্রাস্ট প্রভৃতি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমেও প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে থাকেন। এছাড়া তাৎক্ষণিক অর্থ পেতে বিকাশ, নদগ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমেও তারা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে অবদান রাখছেন।
অন্যদিকে হুন্ডির মতো অবৈধ বিভিন্ন চ্যানেলে আরও কোটি কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসছে জেলায়। যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন অনেক প্রবাসী।
চাঁদপুর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর ১৬২টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। প্রবাসীর বেলায় দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁদপুর রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব। এর পরের স্থান হলোÑকুয়েত, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান ও লিবিয়া। নদীমাতৃক চাঁদপুরের জন্য এটি একটি বিশাল প্রাপ্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চাঁদপুরের প্রবাসীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলোতে শ্রম দিচ্ছেন। তবে মালয়েশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশে চাঁদপুরের প্রবাসী কর্মজীবী রয়েছেন। তারাই এসব রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
প্রবাসীরা প্রতি মাসে বিভিন্ন অর্থলগ্নী আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে এসব রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। কোনো কোনো ব্যাংক কেবল গোপন একটি পিন নম্বরের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছে। অনেক প্রবাসী গ্রাহক তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও অর্থ প্রেরণ করেন। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক অর্থ দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। ইতোমধ্যে দেশে বৈদেশিক রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক রেমিট্যান্স ডেস্ক ও হেলপ ডেস্ক আলাদাভাবে সেবা প্রদানের জন্য খোলা হয়েছে। প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাংক গ্রাহককে সেবা প্রদানে সক্ষম হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের রূপালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক রূপক কুমার রক্ষিত চাঁদপুরের রেমিট্যান্স অর্জন সম্পর্কে বলেন, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো রেমিট্যান্স। এতে ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বৈদেশিক রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের গ্রামে-গঞ্জে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণে প্রতিটি বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখা যাচ্ছে। রূপালী ব্যাংক তাদের সার্বিক লেনদেনের জন্য আন্তরিকতার সহিত কাজ করে থাকে।