পাঁচ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ

রহমত রহমান: চলতি বছরের মার্চ থেকে চলছে করোনা মহামারি। করোনার প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানিতে। কমলাপুর আইসিডি কাস্টম হাউসে করোনার সময় কনটেইনার কম এসেছে ৫১ শতাংশ। ফলে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের হার ১১ দশমিক ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমদানি পণ্যের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরপরও এ কাস্টম হাউসে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পরিবীক্ষণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। কমলাপুর আইসিডি কাস্টম হাউস সম্প্রতি পাঁচ মাসের রাজস্ব আহরণের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এনবিআরে। তাতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরই মধ্যে ১৫-২০ জন করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সার্বক্ষণিকভাবে পরামর্শ ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় কোনো জীবনহানি হয়নি। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আমদানি-রপ্তানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এই কঠিন সময়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের গাইডেন্স, পরামর্শ ও সহায়তায় আইসিডি টিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন, রিফান্ড প্রদান ও নিলামের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

রাজস্ব আহরণ পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যার বিপরীতে বেশি আদায় হয়েছিল ২৩১ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ১৫৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে এক হাজার ২৮০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ১২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ৬৬ শতাংশ।

তিন মাসের রাজস্ব আদায় তুলে ধরে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮৭ কোটি ২২ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় হয়েছে। আদায় প্রবৃদ্ধি ৬২ শতাংশ। অক্টোবর মাসে ১১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় হয়েছে। আদায় প্রবৃদ্ধি ৫৮ শতাংশ। নভেম্বর মাসে ৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় হয়েছে। আদায় প্রবৃদ্ধি ৩৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে। তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ৫১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছর এ বন্দরে কন্টেইনার এসেছে চার হাজার ২৮১টি। এ অর্থবছর কন্টেইনার এসেছে দুই হাজার ৯৭টি, যা গত অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার ১৮৪টি কম। গত অর্থবছরের তুলনায় কন্টেইনার কম এসেছে ৫১ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। গত অর্থবছর বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে এক হাজার ৭০৩টি। এ অর্থবছর বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়েছে এক হাজার ৫১২টি। বিল অব এন্ট্রি কম দাখিল হয়েছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ।

গত অর্থবছর নভেম্বর পর্যন্ত পণ্য আমদানি হয়েছে ৩২ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন। এ অর্থবছর নভেম্বর পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ২৬ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন। আমদানি হ্রাস পেয়েছে ছয় হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন বা ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার ৩১৮টি মামলা করা হয়েছে। ৮২ কোটি তিন লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন ও ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পিসিএ’র মাধ্যমে উদ্ঘাটিত রাজস্ব প্রায় ৩৪ লাখ টাকা। রপ্তানি সম্পন্ন হওয়ায় ৫৪টি ব্যাংক গ্যারান্টি নিষ্পত্তি এবং ১৪টি বিল অব এন্ট্রির অধীনে ১৩টি রিফান্ড হিসেবে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের পরিমাণ ৯৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

সাফল্যের কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করায় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া ভালো, সৎ কর্মকর্তা ও ইনোভেটিভ কাজকে উৎসাহিত করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, অটোমেশনে অ্যাসাইকুডার ব্যবহার নিশ্চিত, প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত, কায়িক পরীক্ষা ও শুল্কায়নে অযাচিত ধাপ পরিহার, সিন্ডিকেট, দলবাজিকে নিরুৎসাহিত করা ও ডিটেইল প্যাকিং লিস্ট প্রদান নিশ্চিত করায় পণ্য পরীক্ষার সময় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

আরও বলা হয়, এক থেকে দেড়শ পণ্যের এইচএস কোড সংশোধন ও সঠিক করায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ভুল এইচএস কোড দিয়ে সিপিসি সুবিধায় পণ্য খালাস বন্ধ করা, এইচএস কোড সংশোধন করায় শূন্য, ৫, ১০ শতাংশ এর পণ্য আমদানি ও শুল্কায়ন ৩৪ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় এবং ১৫ ও ২৫ শতাংশ পণ্যের আমদানি ও শুল্কায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। সেমি ও ফিনিশড পণ্যের মূল্য পণ্যের কাঁচামালের মূল্যের তুলনায় যৌক্তিকভাবে অধিকতর নির্ধারণ ও নিশ্চিত করা। পণ্য পরীক্ষা ও প্রতিবেদনে দিনের কাজ একই দিনে সম্পন্ন নিশ্চিত করায় পণ্য খালাসের সময় কমেছে, ফলে ব্যবসায়ীরা এ পোর্ট ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছেন। এছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও কেমিক্যাল পণ্যের টিডিএস বিশ্লেষণ করায় সঠিক পণ্যের প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এক হাজার ৪০০ থ্রিপিস ও এক হাজার ৬০০ শাড়ি প্রেরণ এবং সর্বপ্রথম আইপিআর আইনের অনুশাসনের পরিপালন করে নেসলে বাংলাদেশকে ১০টি পণ্যের জন্য সার্টিফিকেট অব রেকোডেশন প্রদান করা হয়েছে।