Print Date & Time : 7 September 2025 Sunday 11:39 am

পাইপলাইনের বদলে তেল খালাস হচ্ছে জাহাজের মাধ্যমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:সাগরে বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাসের ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম)’ প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলক পর্যায়েই হোঁচট খেয়েছে। পাইপলাইনে ত্রুটি পাওয়ার কারণে এসপিএম বয়াতে নোঙর করা জাহাজটি থেকে আপাতত পাইপলাইনে আর তেল খালাস হচ্ছে না। এর পরিবর্তে লাইটার জাহাজে খোলাস হচ্ছে। যদিও জাহাজ থেকে সরবরাহ করা পুরো তেল সাগরে পড়ে যায়।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিদেশ থেকে বড় বড় জাহাজে করে আমদানি করা অপরিশোধিত ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে খালাস করা হয়। এতে সময় লাগে অনেক বেশি, যা আবার সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এমন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সময় ও অর্থের অপচয় বেশি হয়। এ জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

২০১৫ সালের নভেম্বরে নেয়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারির মধ্যে সংযোগ তৈরি করা হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এসপিএম স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হয় কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে।

এসপিএম চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সৌদি আরব থেকে প্রায় ৮২ হাজার টন অশোধিত তেল নিয়ে জাহাজটি গত ২৪ জুন দেশে পৌঁছে। এরপর সাগর উত্তাল থাকায় সাত দিন অপেক্ষার পর গত ২ জুলাই বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের তত্ত্বাবধানে তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ ‘হরে’ ত্রুড অয়েল নিয়ে পাইপযুক্ত বয়ায় সফলভাবে ভেড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরে টাগবোট কান্ডারি-৩, কান্ডারি-৪ ও কান্ডারি-১০ জাহাজ এবং পাইলট জাহাজ দিশারি-২ সহায়তা করে সফলভাবে মুরিং করেছিল। এরপর গত ৪ জুলাই তেল খালাস শুরু হয়। কিন্তু পরদিন বুধবার ক্রুটি পাওয়ায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিপিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, পাইপলাইনে ত্রুটি থাকায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত বুধবার দুপুর তিনটা নাগাদ পাইপলাইনে তেল খালাসের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে প্রচলিত লাইটারিং প্রক্রিয়ায় সৌদি আরব থেকে আনা তেল খালাস হচ্ছে। সাগরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকায় উত্তাল ঢেউয়ে এসপিএম বয়াতে তেলবাহী জাহাজ ‘হরে’কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মহেশখালির কাছাকাছি। সেখানেই অবস্থান করে লাইটারিংয়ের মাধ্যমে তেল নিয়ে আসা হবে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। যদিও এসপিএমের টেকনিক্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। ফলে বিস্তারিত এখন বলা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে বিপিসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও পরিচলন) খালেদ আহম্মেদের ব্যবহƒত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি। ফলে উনার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সৌদি আরব থেকে আনা ক্রুড অয়েল এসপিএম পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার দুপুরে হোর্স পাইপে ত্রুটি পাওয়ায় আপাতত আর পাইপলাইনে তেল খালাস হচ্ছে না। ফলে সনাতনি প্রক্রিয়ায় খালাস হচ্ছে। যদিও পাইপলাইনে তেল খালাসের কাজটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি কাজ। সবে পাইপলাইনের কাজ শেষ করে আমরা পরীক্ষামূলক এটি চালু করছি। এই পরীক্ষায় কোনো ত্রুটি পেলে সেটি সারানোর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পাইপলাইনে তেল খালাসের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। এ বিষয়ে আমাদের কারিগরি দল বিষয়টি দেখছেন। তখন বিস্তারিত বলতে পারব।

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় এখন বড় জাহাজগুলো থেকে তেল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১১ দিন এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলবাহী জাহাজ খালাসে ৪-৫ দিন সময় লাগে।