Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 4:49 am

পাকিস্তানের বিপক্ষে আশা জাগিয়েও হারল বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে গতকাল জেতার অনেক কাছে গিয়েও হারল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে মাত্র দুই রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ৪ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। তবে ম্যাচ শেষে নিজেদের হারের বিপরীতে পুরো কৃতিত্ব পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের দিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলপতি বলেন, আমাদের স্কোরটা ১৪০ হলে ভালো হতো। তবে ১২৭ রান করার পর আমরা ভাবছিলাম যদি শুরুতে কয়েকটা উইকেট নিতে পারি, যেমনটা আমাদের বোলাররা নিয়েছে। তাসকিন, মোস্তাফিজ, মেহেদিরা দারুণ বোলিং করেছে। আমরা খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু পুরো কৃতিত্ব তাদের শেষ দুই ব্যাটারের।

শেষ ওভারে পাকিস্তানের তখন প্রয়োজন মাত্র ২ রান। বোলার লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। প্রথম বলে শাদাব খানকে কোনো রান দিলেন না। দ্বিতীয় বলটিকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারলেন শাদাব। বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে আছড়ে পড়ল। ছক্কা। ৪ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল পাকিস্তান।

অথচ, জয়ের কী দারুণ সম্ভাবনাই তো তৈরি করেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ফাখর জামান আর খুশদিল শাহকে পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে দিয়ে সে সম্ভাবনাটা আরও জোরাল করেছিল টাইগাররা।

কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান আর শরিফুল ইসলামের দুই ওভারেই ম্যাচ নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান শাদাব খান আর মোহাম্মদ নওয়াজ। দুই ওভারে এই দুই বোলারই ১৫ রান করে দিলেন ৩০ রান। তাতেই ম্যাচ হাত থেকে ফসকে যায় বাংলাদেশের।

শাদাব খান আর মোহাম্মদ নওয়াজ মিলে ১৫ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেন। ১৮ এবং ১৯তম ওভারেই বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে পড়ে। ১০ বলে ২১ রানে শাদাব খান এবং ৮ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নওয়াজ।

১২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান যখন ২৪ রানেই চারজন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বসে, তখন তাদের খুব বাজে অবস্থা টের পাওয়া যাচ্ছিল। সত্যিই দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে গিয়েছিল পাকিস্তান।

কিন্তু তাদের ওই অবস্থা থেকে টেনে তোলেন ফখর জামান এবং খুশদিল শাহ। ৫৬ রানের জুটি গড়েন এই দুজন। সবচেয়ে বড় কথা দুর্দান্ত ব্যাট করে ম্যাচকে বাংলাদেশের হাত থেকে বের করে নিচ্ছিলেন তিনি।

সেই ফখর জামানকে অবশেষে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন আহমেদ। আউট সুইঙ্গার বলটি ফখর জামানের ব্যাটে লেগে চলে যায় সোহানের হাতে। ৩৬ বলে খেলা ৩৪ রানের ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে সেখানে।

৮০ রানের মাথায় ফখর জামান আউট হওয়ার পর ৯৬ রানের মাথায় ফিরে যান আরেক সেট ব্যাটসম্যান খুশদিল শাহও। শরিফুল ইসলামের কোমর পর্যন্ত লাফিয়ে ওঠা বলটিকে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে খুশদিল জমা দেন উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের

 হাতে। ৩৫ বলে ৩৪ রান করেন তিনি। এ দুজন আউট হওয়ার পর জয়ের বাকি কাজ সেরে ফেলেন শাদাব খান আর মোহাম্মদ নওয়াজ।

এর আগে ১২৭ রানকেই জয়ের পুঁজি বানিয়ে তুলছিল বাংলাদেশ দলের বোলাররা। মিরপুরের মাঠে এর চেয়ে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে না। কারণ, ১২৭ রান করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জিতেছিল বাংলাদেশ। যদিও এবার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা নেই এবার। সম্পূর্ণ নতুন একটি দল। এরা কী পারবে ১২৭ রান রক্ষা করতে?

অন্যদিকে পাকিস্তানের বিখ্যাত জুটি বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই দুজনের ব্যাটে বিশ্বকাপে উড়েছিল পাকিস্তান। তারা যদি দাঁড়িয়ে যান তাহলে তো কথাই নেই।

তবে, তাদের দাঁড়াতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। তৃতীয় ওভারের ৪র্থ বলেই জুটি ভেঙে দেন তিনি। মোস্তাফিজের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে রিজওয়ানের স্ট্যাম্প উড়ে যায়। ১১ বলে ১১ রান করে ফিরে যান পাকিস্তানের এই দুর্ধর্ষ টি-টোয়েন্টি ব্যাটার।

এরপর ফখর জামানকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন বাবর আজম। কিন্তু তাদেরও খুব বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দিলেন তাসকিন আহমেদ। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে বাবর আজমের স্ট্যাম্পও উড়িয়ে দিলেন তাসকিন। তার গতিময় বলটি খেলতে গিয়ে ভেতরের কানায় লাগিয়ে স্ট্যাম্পে টেনে আনেন বাবর।

দুই পেসার তাসকিন আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমানের তোপে দুই ওপেনার বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল পাকিস্তান, তখন তাদের ওপর আঘাত হানেন স্পিনার শেখ মেহেদীও। তার ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়েছেন হায়দার আলিও।

রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি হায়দার আলি। এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিং বিপর্যয় কাটাতে মাঠে নামেন শোয়েব মালিকও। কিন্তু দুর্ভাগ্যের শিকার হলেন তিনি। ৬ষ্ঠ ওভারের শেষ বলে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হলেন তিনি। মোস্তাফিজের বলটি এক বাউন্সে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ছিল।

শোয়েব মালিক ছিলেন উইকেটের বাইরে। সোহান বলটি ছুড়ে দেন স্ট্যাম্পে। টিভি আম্পায়ারের কাছে আউটের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়। দেখা গেল শোয়েবের ব্যাট মাটি স্পর্শ করার আগেই স্ট্যাম্প ভেঙে যায়। ২৪ রানে ৪র্থ উইকেট হারিয়ে বসল পাকিস্তান। এরপরই জুটি গড়ে তোলেন ফখর জামান এবং খুশদিল শাহ।

ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে টসের বিষয়টি। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যায় মাহমুদউল্লাহ বলেন, আমরা যখন আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেই, তখন দেখে মনে হচ্ছিল উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। কিন্তু সেখানে হয়তো বোলারদের জন্যও সাহায্য ছিল।

এ সময় টপঅর্ডারের টানা ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আমাদের ব্যাট হাতে আরও ভালো করা উচিত ছিল। বিশেষ করে টপঅর্ডার থেকে …, যেটা আমরা বিশ্বকাপ থেকেই তেমন রান পাচ্ছি না। আশা করি আগামীকাল (শনিবার) আমরা আরও ভালো পরিকল্পনা নিয়ে আসব এবং সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব।