পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ভারতে গ্রেপ্তার ৯

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেনÑজ্যোতি মালহোত্রা, দেবেন্দ্র সিং, নুমান ইলাহি, আরমান, তারিফ, শাহজাদ, মুহম্মদ আলী মুর্তজা, গাজালা মাহমুদ ও ইয়ামিন মাহমুদ।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন হরিয়ানা, তিনজন পাঞ্জাব ও একজন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। তাদের কেউ ট্রাভেল ব্লগার, কেউ নৈশপ্রহরী, কেউ শিক্ষার্থী আবার কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যেমন-জ্যোতি মালহোত্রা একজন ট্রাভেল ব্লগার। ৩৩ বছর বয়সী এই ব্লগারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পেহেলগামে হামলার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং ভারতের সামরিক বাহিনীর কিছু তথ্য তিনি হোয়াটসঅ্যাপে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

২৫ বছর বয়সী দেবেন্দ্র সিং ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পাতিয়ালা জেলার খালসা কলেজের শিক্ষার্থী। গত ১২ মে হরিয়ানার কাইথাল শহর থেকে গ্রেপ্তার হননি। দেবেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাকিস্তানের পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তিনি পাতিয়ালা সেনানিবাসের একাধিক ছবি আইএসআইয়ের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

হরিয়ানার পানিপথ শহরে নৈশপ্রহরী হিসেবে কর্মরত নোমান ইলাহির বিরুদ্ধেও আইএসআই সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। নোমানের শ্যালক নিয়মিত আইএসআইয়ের কাছে গোপন তথ্য পাঠাতেন এবং এর বিনিময়ে আইএসআই থেকে নোমানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত অর্থ আসত বলে জানিয়েছে পানিপথ পুলিশ। বাকি ছয়জনের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের হাইকমিশন কিংবা আইএসআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বার্তা সংস্থা এএনআইকে জানান, জ্যোতি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন।

পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে জ্যোতি মালহোত্রার পরিবার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার বাবা বলেছেন, জ্যোতি কোনোভাবেই গুপ্তচর নন। তিনি যথাযথ অনুমতির মাধ্যমেই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি শুধু সংস্কৃতি বিনিময়ের কাজ করে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ। অতর্কিত এই হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এ উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসলামাবাদের তথ্য অনুযায়ী, অপারেশন সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তানে মোট ৫১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন সেনাসদস্য, বাকিরা বেসামরিক। তাদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ৭৮ জন।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনা অভিযানের তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানুম মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সিসার প্রাচীর। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের পাল্টা এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্য ও ১৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। ১০ মে শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে এই যুদ্ধবিরতি।